সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি কি?

প্রশ্নঃ সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি কি? সমাজকর্মের মৌলিক ও সাহায্যকারী পদ্ধতিগুলো কিভাবে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত তা উদাহরণসহ আলোচনা কর।

earn money

ভূমিকা: পেশাগত অনুশীলনের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীগন যেসব পদ্ধতি সরাসরি প্রয়োগ করে থাকেন তাকে মৌলিক পদ্ধতি বলা হয়। মৌলিক পদ্ধতি কে প্রত্যক্ষ পদ্ধতি বলেও অভিহিত করা হয়। মূলত দু’টি পদ্ধতিকে আশ্রয় করে সমাজকর্ম পদ্ধতি পরিচালিত হয়ে থাকে। যেমন- মৌলিক পদ্ধতি এবং সহায়ক পদ্ধতি। যেসব পন্থা বা প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ বা সরাসরি প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার সমাধান করা হয় তাকে মৌলিক পদ্ধতি বলে। 

সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি:  সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি তিনটি।

১। ব্যক্তি সমাজকর্ম 

২। দল সমাজকর্ম 

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


৩। সমষ্টি সমাজকর্ম

নিম্নে এসবের ধারনা দেওয়া হলো ।

১. ব্যাক্তি সমাজকর্ম: সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের জন্য পেশাদার সমাজকর্মীগণ যে পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করেন তাকে ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতি বলা হয়। এইচ এইচ পার্লম্যান এর মতে সামাজিক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে অধিকতর কার্যকর ভাবে সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারে সেজন্য মানবকল্যাণ ধর্মীয় এজেন্সী কর্তৃক প্রদত্ত সহায়তামূলক ব্যবস্থায় ব্যক্তি সমাজকর্ম । 

২. দল সমাজকর্ম: দলীয় অভিজ্ঞতা প্রয়োগের মাধ্যমে দলের সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য সমাজকর্মীগণ যে পদ্ধতির আশ্রয় নেন তাই হল দল সমাজকর্ম পদ্ধতি। 

আরো পড়ুনঃ মাদকাসক্তি কি? এ সমস্যার সমাধানে একজন সমাজকর্মীর ভূমিকা আলোচনা কর।

৩. সমষ্টি সমাজকর্ম: পেশাদার সমাজকর্মী কর্তৃক একটি সমষ্টির বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত কৌশল বা উপায় হচ্ছে সমষ্টির সমাজকর্ম । সমষ্টি সমাজকর্ম কি তা আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  • ক. সমষ্টি সংগঠন: সমাজকর্মের যে প্রক্রিয়া বা কৌশল প্রয়োগ করে সমাজকর্মী কোন সমষ্টির চাহিদা নিরুপন করে এবং সমষ্টি প্রতিনিধিদের সহায়তায় তাদের বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের সদ্ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালান তাদের সমষ্টি সংগঠন বলে
  • খ. সমষ্টি উন্নয়ন: সমষ্টি উন্নয়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে সমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ও জনগণ যৌথভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।

মৌলিক ও সাহায্যকারী পদ্ধতিসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক: সমাজকর্মের মৌলিক ও সহায়ক

পদ্ধতিগুলো পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। নিম্নে উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্কের বিশেষ দিকগুলো আলোচনা করা হল:

১. পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে: সমাজকর্ম জীবন সম্পর্কে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে বলে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সাথে কাজ করতে গিয়ে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে কোন একটি মাত্র পদ্ধতি প্রয়োগ না করে একাধারে সকল পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে। তাছাড়া সামাজিক সমস্যার পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সমাজকর্মের পদ্ধতিগুলোকে পরস্পরের কাছাকাছি টেনে রেখেছে।

২. সমাজকল্যাণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে: আধুনিক সমাজকল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা সম্প্রসারণের ফলে সমাজের কল্যাণসাধনে রাষ্ট্রের দায়িত্ব অনেক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রাষ্ট্র এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে এসেছে। এতে সমাজকল্যাণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের জন্য সমাজকল্যাণ প্রশাসন একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যা সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতিকে মৌল পদ্ধতির সাথে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে।

৩. অভিন্ন লক্ষ্য: সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিসমূহ যেমন এর অভিন্ন লক্ষ্য, সাধারণ নীতিমালা, সামঞ্জস্যপূর্ণ স্তর বা ধাপ সমূহ, সামগ্রিক জীবন এবং সামাজিক সমস্যা ও সমাজকল্যাণ কার্যাবলির পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সম্পর্কের জন্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ, তেমনি সহায়ক পদ্ধতিগুলোও এর সহায়তাপূর্ণ ভূমিকার জন্য মৌলিক পদ্ধতিগুলোর সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত।

আরো পড়ুনঃ কল্যাণ রাষ্ট্র কি? কল্যাণ রাষ্ট্রের কার্যাবলী আলোচনা কর।

৪. সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে: বর্তমান সমাজকল্যাণ একটি সংগঠিত প্রক্রিয়া। সাধারণত কোন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সির মাধ্যমে এসব সেবা প্রদান করা হয়। সুষ্ঠুভাবে সংগঠন বা এজেন্সি পরিচালনা করে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জন করার জন্য সামাজিক প্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যদিকে, এজেন্সির লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়নের জন্য সমাজকর্ম প্রশাসন ও সমাজকর্ম গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ মৌলিক পদ্ধতির উপর ভিত্তিশীল যে কোন ধরনের সেবাই প্রদান করা হোক না কেন সামাজিক প্রশাসন ও সামাজিক গবেষণার সহায়তা অপরিহার্য।

৫. সামাজিক কার্যক্রম প্রয়োগের ক্ষেত্রে: সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে গঠনমূলক ও পরিবর্তন আনয়ন করা। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন পরিবর্তন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা। এছাড়া জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলোর সফল বাস্তবায়ন আশা করা যায় না। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের সাহায্যকারী পদ্ধতি সামাজিক কার্যক্রম প্রয়োগ করে মৌল পদ্ধতিসমূহ বাস্তবায়নের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।

৬. তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে: সমাজকর্মের মৌল পদ্ধতির সাহায্যে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের সম্পদ ও সামর্থ্যের সঠিক তথ্য জানা থাকা দরকার। এজন্য সমাজকর্ম গবেষণার মাধ্যমে সমাজকর্মীরা তথ্যভিত্তিক জ্ঞান লাভ করে থাকেন, যা তাদের পরিকল্পিত উপায়ে সামাজিক সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে থাকে।

৭. নীতি মেনে চলার ক্ষেত্রে: সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও এরা সকলেই কতকগুলো সাধারণ- মূল্যবোধের ভিত্তিতে কাজ করে এবং এমন কতকগুলো নীতি মেনে চলে যেগুলো সকল পদ্ধতিতেই প্রযোজ্য। এ সাধারণ নীতিগুলো হল ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি দান, গণতান্ত্রিক অধিকার, সকলের সমান সুযোগ দান, সামাজিক দায়িত্ব, সম্পদের সদ্ব্যবহার প্রভৃতি।

৮. সমাধান প্রক্রিয়ার সফলতার ক্ষেত্রে: মনোসামাজিক তথ্য সংগ্রহ, সমস্যা নির্ণায়ন এবং সমাধান সকল মৌলিক পদ্ধতিতে এ তিনটি প্রধান ধাপ বিদ্যমান রয়েছে, যাদের সমষ্টিকে বলা হয় সমাধান ব্যবস্থা। এ সমাধান প্রক্রিয়ার সফলতা বহুলাংশে নির্ভর করে সহায়ক পদ্ধতি বিশেষ করে সামাজিক গবেষণার উপর।

৯. সমস্যাসমূহের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা: সামাজিক সমস্যাসমূহ একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত। এ কারণেই সমস্যার পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সমাজকর্মের পদ্ধতিগুলোকে পরস্পরের কাছাকাছি থাকতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ কিশোর অপরাধ কি? কিশোর অপরাধের কারণ গুলো আলোচনা কর।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, সমাজকর্মের পদ্ধতিসমূহের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও এদের পরস্পরের মধ্যে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান।

Shihabur Rahman
Shihabur Rahman
Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক