fbpx

বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর নরগোষ্ঠী গত পরিচয়

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর নরগোষ্ঠী গত পরিচয় বিশদভাবে আলোচনা কর। 

ভূমিকা: মানব জীবাশ্ম সম্বন্ধে অনুসন্ধানের ঘাটতি থাকার কারণে বাংলাদেশের মানুষের নগোষ্ঠীগত পরিচয় নির্ণয় করা সহজ নয়। সাধারণভাবে স্বীকৃত এ অঞ্চলে আদি মানুষের বসবাস ছিল না। ফলে এখানে এক সময় যারা বসতি স্থাপন করেছিল তারা সবাই বহিরাগত। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন মানুষের মিলনের ফলে বাংলাদেশে একটি সংকর জনগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে।

নৃতাত্ত্বিক গঠন: বাঙালি জাতি সম্পর্কে নবিজ্ঞানীদের ধারণা ‘বাঙালি একটি সংকর জাতি বা মিশ্র জাতি’। বাঙালি এ অঞ্চলে বসবাসকারী আদিম মানুষের মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর বহু জাতি বাংলায় প্রবেশ করেছে অনেকে আবার বেরিয়ে গেছে। তবে পেছনে রেখে গেছে তাদের আগমনের অকাট্য প্রমাণ। তাদের আগমন, বসতি, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, নৃতাত্ত্বিক গঠন প্রভূতি বাঙালি জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, 

আরো পড়ুনঃনগর দারিদ্র্যের সংজ্ঞা দাও। নগর দারিদ্র্যের বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ

“কেহ নাহি জানে কার আহবানে কত মানুষের ভারতে এল কোথা হতে সমুদ্রে হল হারা।”  

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


বিভিন্ন যুগে ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের মিলনের ফলে আজকের বাঙালির সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমরা যুগ বিভাজন অনুযায়ী বাঙালির নৃতাত্ত্বিক গঠনে প্রভাব বিস্তারকারী বিভিন্ন জাতী ও ভাষা গোষ্ঠীর আদিমানুষের আগমন সম্পর্কে জানব:

প্রাচীন যুগ: ৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রাচীন যুগের বিস্তার অনুমান করা হয়। পৃথিবীর প্রধান চারটি নরগোষ্ঠী হল নিগ্রো, মঙ্গোলীয়, ককেশীয় ও অস্ট্রেলীয়। জাতিতাত্ত্বিক বিজ্ঞানীদের মতে,  পৃথিবীর এই চারটি প্রধান প্রাচীন নরগোষ্ঠীর মধ্যে কোন না কোন শাখার আগমন ঘটেছে বাংলায় এই প্রাচীন যুগে। তবে এটি বেশি প্রসিদ্ধ যে বাংলায় প্রাচীন নরগোষ্ঠীর মধ্যে অস্ট্রিক ভাষার সবচেয়ে বেশি। প্রাচীন সাহিত্যে তাদেরকে নিষাদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্ভবত তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত তাদের আদি বাসস্থান থেকে বাংলাদেশে এসেছিল।এ সময়ে মঙ্গোলীয় নরগোষ্ঠী ককেশাস অঞ্চল থেকে এসেছিল বাংলায়। দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী আসে যার মোঙ্গল ভাষায় কথা বলতো। 

অতুল সুর বলেছেন যে, অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় ভাষাভাষীদের পরে বাংলায় আসে আলোপিরা। আলোপীয়রা যে বহু সংখ্যায় বাংলায় এসেছিল তা বাঙালির নৃতাত্ত্বিক গঠন থেকে প্রমাণিত হয়। তাছাড়া যুদ্ধযাত্রা, বাণিজ্য ও ধর্ম প্রচার উপলক্ষে বহুসংখ্যক আর্য এদেশে আগমন ও বসবাস করতে আরম্ভ করেন। আর্যদের পরে মুসলিমদের আগমনের পূর্ব সময় পর্যন্ত আর  কোনো উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী বাংলায় আসেনি।

আরো পড়ুনঃসুশীল সমাজ বলতে কি বুঝ?

মধ্যযুগ: ১৩ শতকের শুরুর দিকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজির নদীয়া বিজয়ের সাথে সাথেই মুসলিম অভিবাসীরা বাংলায় ঢুকে পড়েন। সব জাতির মুসলিম শাসনকর্তা, সেনাপতি, সৈনিক, শাসক, শিক্ষক, ধর্মপ্রচারক, চিকিৎসকগণ, স্থপতি, কারিগররা এখানে আসেন। এসময় বাংলায় তুর্কিদেরও আগমন ঘটে। আরব জাতির বণিক ও সুফি সাধকরা  তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন ও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জনগণের নৃতাত্ত্বিক কাঠামোয় মিশে যান। ইলিয়াস শাহী আমলে ও পরবর্তীতে আবিসিনিয়ানরা বাংলার শাসক ছিলেন। মোঘল শাসনামলে শাসক, ধর্মপ্রচারক, শিক্ষক, চিকিৎসক, কারিগর রূপে এবং নওয়াবি আমলে পারসিক বা ইরানি জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীদের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের শিয়া সম্প্রদায়ের একটা বিরাট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

আধুনিক যুগ: ইংরেজ শাসনামল অর্থাৎ ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলায় বহুজাতির আগমন ঘটে। এ সকল জাতির উপস্থিতি ও রক্তের সংমিশ্রণে বাঙালির নৃতাত্ত্বিক কাঠামোতে পরিবর্তন সূচিত হয়। ধর্ম প্রচার ও পরবর্তীতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালে ইউরোপীয়রা যেমন: ব্রিটিশ, পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি, স্প্যানিশ, আর্মেনিয়ান জাতিগোষ্ঠী প্রবেশ করেন। এভাবে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগে বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক কাঠামোতে রক্তের মিশ্রণ প্রক্রিয়া সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। আমরা দেখি যুগে যুগে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এবং ভারতের বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন নরগোষ্ঠী বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক গঠনে অবদান রাখতে। তাই মোট জাতিগোষ্ঠীর ৬০ ভাগ অস্ট্রেলীয়, ২০ ভাগ মঙ্গোলীয়, ১৫ ভাগ নেগ্রিটো এবং ৫ ভাগ অন্যান্য নরগোষ্ঠীর মিশ্রণে পেয়েছে বলে অনুমান করা যেতে পারে।

google news

আরো পড়ুনঃপল্লী উন্নয়ন বলতে কি বুঝ?

উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্ট যে, বাংলায় বসবাসকারী মানুষের প্রাক ইতিহাস যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ সমর্থিত না হওয়ায় বাঙালিকে একক নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বলার কোন সুযোগ নেই। আহমদ শরীফ তার ‘‘বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয়’’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, “বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় অতি জটিল।” তবে একথা সমর্থনযোগ্য যে,  বাঙালি একটি সংকর জাতি এবং শংকর হওয়া  সত্বেও এদের দেহবৈশিষ্ট্যে আদি অস্ট্রেলীয় তথা ভেড্ডিড জনগোষ্ঠীর দৈহিক বৈশিষ্ট্য বেশি প্রকট।

Riya Akter
Riya Akter
Hey, This is Riya Akter Setu, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক