Jane Eyre
Brief Biography: শার্লট ব্রন্টি (1816–1855): শার্লট ব্রন্টি ১৮১৬ সালের ২১ এপ্রিল ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের (Yorkshire) থর্নটন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন Reverend Patrick Brontë, একজন আইরিশ ধর্মযাজক এবং লেখক। তার মা, Maria Branwell Brontë, ১৮২১ সালে মারা যান, ফলে শার্লট এবং তার ভাইবোনেরা শৈশবেই মাতৃহীন হন। শার্লট ছিলেন ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। তার দুই বোন—এমিলি ব্রন্টি (Emily Brontë) এবং অ্যান ব্রন্টি (Anne Brontë)—পরবর্তীতে ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিতি পান। শার্লট ছোটবেলা থেকেই কল্পনাপ্রবণ ছিলেন এবং ভাইবোনদের সাথে মিলে গল্প লিখতেন। তার প্রথম জীবনে তিনি শিক্ষকতা ও গৃহশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন, তবে লেখালেখির প্রতি গভীর আগ্রহ ধরে রাখেন। তিনি প্রথমে “Currer Bell” ছদ্মনামে লিখতেন, কারণ সে সময় নারীদের লেখক হিসেবে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা কম ছিল।
১৮৪৭ সালে তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস “Jane Eyre” প্রকাশিত হয় এবং বিশাল সাফল্য লাভ করে। এই উপন্যাসে তিনি অনাথ মেয়ে জেনের সংগ্রাম, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং আত্মমর্যাদার লড়াই চিত্রিত করেছেন। পরে তিনি Shirley (১৮৪৯), Villette (১৮৫৩) এবং অসমাপ্ত উপন্যাস The Professor প্রকাশ করেন। তার রচনায় নারীর আত্মনির্ভরতা, আবেগ, প্রেম ও সামাজিক বাধাগুলো বাস্তবধর্মীভাবে ফুটে ওঠে। ব্যক্তিগত জীবনে শার্লট বহু দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেন। ১৮৪৮-৪৯ সালে তার ভাই ব্র্যানওয়েল এবং বোন এমিলি ও অ্যান অল্প সময়ের মধ্যে মারা যান, যা তাকে গভীরভাবে আঘাত করে। ১৮৫৪ সালে তিনি Reverend Arthur Bell Nicholls-কে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের কিছুদিন পরই, ১৮৫৫ সালের ৩১ মার্চ, মাত্র ৩৮ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শার্লট ব্রন্টিকে “একজন অগ্রগামী নারী ঔপন্যাসিক” বলা হয়, কারণ তিনি নারীর স্বাধীনতা ও মানসিক জগতকে গভীরভাবে উপস্থাপন করেছেন। তার “Jane Eyre” আজও বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে গণ্য হয়।
Key Facts
- Author: Charlotte Brontë (1816–1855)
- Author’s Full Name: Charlotte Brontë
- Full Title of Book: Jane Eyre: An Autobiography
- Author’s Title in Book: Currer Bell (pen-name of Charlotte Brontë)
- Title of the Author: One of the Brontë Sisters / Pioneer of Feminist Fiction
- Written Date: 1846-1847
- First Publication Date: 16 October 1847
- Publisher: Smith, Elder & Co. (London)
- Genre: Gothic Novel / Bildungsroman (Coming-of-Age Novel) / Romantic Novel
- Form: Fiction (Prose Novel)
- Point of View: First-Person (from Jane Eyre’s perspective)
- Climax: Jane discovers Bertha Mason, Rochester’s insane wife, in the attic on their wedding day
- Tone: Passionate, Serious, Moral, Introspective, Romantic
- Source: Inspired by Brontë’s own life experiences, including her time at Clergy Daughters’ School and her work as a governess
- Narrative Style: Autobiographical, personal
- Famous For: One of the earliest feminist novels.
- Setting:
- Setting (Time): Early 19th century (Victorian Era)
- Setting (Place): Northern England — Gateshead Hall, Lowood School, Thornfield Hall, Moor House, and Ferndean
আরো পড়ুনঃ A Tale of Two Cities Bangla Summary
Key Notes- বাংলা
- Feminism (নারীবাদ): নারীবাদ হলো নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদার দাবি। সাহিত্যে এটি নারীর স্বাধীনতা, কণ্ঠস্বর, এবং সমাজে তার অবস্থানকে তুলে ধরে। Jane Eyre-এ শার্লট ব্রন্টি দেখিয়েছেন কিভাবে নারী নিজের ইচ্ছা, স্বপ্ন ও আত্মসম্মানের জন্য লড়াই করে।
- Gothic Elements (গথিক উপাদান): গথিক সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য হলো ভয়, রহস্য, অন্ধকার পরিবেশ, অতিপ্রাকৃত শক্তি এবং আবেগ। Jane Eyre-এ থর্নফিল্ড হলের অন্ধকার, ঝড়-বৃষ্টি, গোপন রহস্য, এবং রহস্যময় চরিত্র বারবার গথিক আবহ তৈরি করেছে।
- Red Room (রেড রুম): শৈশবে জেনকে রেড রুমে শাস্তি দেওয়া হয়। এই ঘরটি একাকীত্ব, ভয়, দমন এবং মানসিক যন্ত্রনার প্রতীক। এটি জেনের জীবনের প্রথম বড় ট্রমা, যা তার চরিত্রে দৃঢ়তা এবং বিদ্রোহী মনোভাব তৈরি করে।
- Madwoman in the Attic (অ্যাটিকের পাগলি নারী): থর্নফিল্ডে আটকে রাখা বার্থা ম্যাসন হলো “ম্যাডওম্যান ইন দ্যা অ্যাটিক।” তিনি পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর দমন, বন্দিত্ব ও ভিন্ন কণ্ঠস্বরের প্রতীক। সাহিত্য সমালোচনায় এটি নারীবাদী প্রতিরোধ ও গোপন সত্য উন্মোচনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
- Romantic Idealism (রোমান্টিক আদর্শবাদ): রোমান্টিক যুগে প্রকৃতি, আবেগ, কল্পনা ও আত্মার স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। Jane Eyre-এ ভালোবাসা, নৈতিকতা, স্বাধীন আত্মপরিচয় এবং প্রকৃতির সাথে গভীর সম্পর্ক রোমান্টিক আদর্শবাদকে ফুটিয়ে তুলেছে।
Background
শার্লট ব্রন্টি ১৮৪৬-১৮৪৭ সালে “জেন আয়ার” উপন্যাসটি লিখেছিলেন। তখন তিনি গভার্নেস হিসেবে কাজ করতেন। তার নিজের জীবন ছিল সংগ্রামে ভরা। ছোটবেলায় তিনি মা এবং দুই বোনকে হারিয়েছিলেন। তিনি দারিদ্র্য আর একাকীত্বের কষ্টও ভোগ করেছেন। শার্লট চাইতেন নারীদের জীবনসংগ্রামের কথা সবাই জানুক। তিনি এমন এক সাধারণ মেয়ের গল্প লিখতে চেয়েছিলেন, যে কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজেকে শক্তভাবে গড়ে তোলে। তিনি নিজের জীবনের অনুভূতি গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে লিখেছিলেন। সেই সময় নারী লেখকদের সম্মান দেওয়া হতো না, তাই তিনি “কারার বেল” ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। তিনি অনেক প্রকাশকের কাছে পাণ্ডুলিপি পাঠান। অনেকেই তা ফিরিয়ে দেন। অবশেষে, ১৮৪৭ সালের অক্টোবরে বইটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর উপন্যাসটি খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মানুষ জেন আয়ারের সাহসী চরিত্রকে ভালোবেসে ফেলে। এটি অন্য প্রেমের গল্পের থেকে একেবারে আলাদা ছিল। শার্লটের ব্যক্তিগত কষ্ট, সম্মানের জন্য তার লড়াই, আর গভার্নেস হিসেবে তার কাজের অভিজ্ঞতা—এসবই “জেন আয়ার” উপন্যাস লেখার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। এই উপন্যাস আংশিক কল্পকাহিনী, আবার আংশিক তার নিজের জীবনের গল্প।
চরিত্রসমূহ – বাংলায়
প্রধান চরিত্র (Major Characters)
- Jane Eyre (নায়িকা): অভিভাবকহীন এতিম মেয়ে, উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। বুদ্ধিমতী, আত্মসম্মানী, নৈতিক ও স্বাধীনচেতা। দারিদ্র্য, একাকীত্ব ও সামাজিক অবজ্ঞার বিরুদ্ধে লড়াই করে। সে সত্যিকারের ভালোবাসা ও মর্যাদাকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখে।
- Edward Rochester (নায়ক): থর্নফিল্ড হলের ধনী মনিব। সে গর্বিত, আবেগী ও রহস্যময়। প্রথম স্ত্রীর সত্য গোপন রাখলেও জেনকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসে। ইচ্ছা ও নৈতিকতার দ্বন্দ্বের প্রতীক।
- St. John Rivers: ধর্মভীরু, গম্ভীর ও উচ্চাভিলাষী যাজক। বিপদে জেনকে সাহায্য করে, কিন্তু তাকে ভালোবাসাহীন বিবাহে বাধ্য করতে চায়। কর্তব্য বনাম আবেগের প্রতীক।
- Bertha Mason (অ্যাটিকের পাগলি নারী): রচেস্টারের প্রথম স্ত্রী। হিংস্র ও উন্মাদ। নারীর দমন, ঔপনিবেশিক শোষণ ও অন্ধ আবেগের প্রতীক।
- Mrs. Reed: জেনের নিষ্ঠুর মামি, পিতামাতার মৃত্যুর পর তাকে লালন-পালন করে। পরিবারে শৈশবের দমন ও অবিচারের প্রতীক।
গৌণ চরিত্র (Minor Characters)
- Helen Burns: লোউড স্কুলে জেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নম্র, ধৈর্যশীলা ও আধ্যাত্মিক। ভোগান্তি মেনে নেওয়ার শিক্ষা দেয়। তার মৃত্যু জেনের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।
- Mr. Brocklehurst: লোউড স্কুলের ভণ্ড প্রধান। বাইরে ধর্ম প্রচার করলেও ভেতরে বিলাসী ও নিষ্ঠুর। ধর্মীয় ভণ্ডামি ও সামাজিক অত্যাচারের প্রতীক।
- Diana ও Mary Rivers: সেন্ট জনের সহৃদয় বোনেরা। জেনকে স্নেহ ও বন্ধুত্ব দেয়। নারী সংহতির প্রতীক।
- Adele Varens: রচেস্টারের পরিচর্যাধীন ফরাসি কন্যা। চঞ্চল ও প্রাণবন্ত। জেনকে ভালোবাসে। শৈশবের নির্দোষিতা ও নতুন শুরুর প্রতীক।
- Grace Poole: থর্নফিল্ডের এক গৃহপরিচারিকা, যে বার্থা মেসনকে পাহারা দেয়। তার উপস্থিতি কাহিনিতে রহস্য ও গথিক আবহ তৈরি করে।
- Bessie Lee: গেটসহেডে জেনের স্নেহশীলা দাইমা। খালার নিষ্ঠুরতার বিপরীতে স্নেহের প্রতীক।
- Mr. Mason: বার্থা মেসনের ভাই। রচেস্টারের বিয়ের গোপন তথ্য ফাঁস করে জেনের বিয়ে থামিয়ে দেয়।
উপন্যাসের দম্পতি ও প্রেমের সম্পর্ক (Couples and Love Connections)
- Jane Eyre ও Edward Rochester: কেন্দ্রীয় প্রেমকাহিনি। শ্রেণি, নৈতিকতা ও গোপন সত্যের বাধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত সমান মর্যাদায় একত্র হয়।
- St. John Rivers ও Rosamond Oliver: সেন্ট জন রোজামন্ডকে ভালোবাসলেও কর্তব্যের জন্য তাকে ত্যাগ করে। আবেগ বিসর্জনের প্রতীক।
- Bertha Mason ও Rochester: এক দুর্ভাগ্যজনক, ধ্বংসাত্মক বিবাহ। গোপন পাপ ও ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলের প্রতীক।
পরিবার ও আত্মীয়স্বজন (Friends and Family)
- The Reed Family: মিসেস রিড ও তার সন্তানরা (এলিজা, জর্জিয়ানা ও জন) – জেনের শৈশবের দমনকারী পরিবার।
- The Rivers Family: সেন্ট জন, ডায়ানা ও মেরি – জেনের চাচাতো ভাইবোন, যারা একদিকে কর্তব্য আরেকদিকে স্নেহের প্রতীক।
- Lowood Community: হেলেন বার্নস (বন্ধু) ও মি. ব্রকলহার্স্ট (অত্যাচারী শিক্ষক)।
- Thornfield Household: অ্যাডেল ভারেন্স, মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স (গৃহকর্ত্রী), গ্রেস পুল, ও বার্থা মেসন
Jane Eyre Bangla Summary
গেটসহেড এ জেনে্র কষ্টময় জীবন: উপন্যাসের শুরুতে আমরা দেখতে পাই, জেন আয়ার (Jane Eyre), একজন ১০ বছর বয়সী অনাথ শিশু, যে গেটসহেড (Gateshead Hall) এ তার মামী মিসেস সারাহ রীডের (Mrs. Sarah Reed) বাসায় থাকতো। তার মামী ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর একজন মহিলা আর জেন আয়ার ছিল তার দু’চোখের বিষ। মিসেস রীডের দুই মেয়ে জর্জিয়ানা (Georgiana) ও এলিজা (Eliza) আর এক ছেলে জন (John)। মায়ের মত তারাও জেনকে ঘৃণা করত। এক্ষেত্রে জন যেন সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সে সারাদিন সুযোগ খুজতো কিভাবে জেনকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও আঘাত করে তার জীবনটা বিষিয়ে তোলা যায়। এই বাড়িতে জেন যদি কারো কাছ থেকে দয়া পেয়ে থাকে, সে হল তাদের বাড়ির পরিচারিকা মিস বেসি (Bessie Lee)।
এমনি একদিন জেনকে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে বই পড়তে দেখে জন তাকে এতিম বলে খোটা দেয়। এটাও বলে যে তাঁরা বাবা তার জন্যে ফুটো পয়সাও রেখে যায়নি। যদি তাদের বাসায় না থাকতো তাহলে জেনকে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে খেতে হত। শেষে তার হাত থেকে বইটা নিয়ে তার মাথায় ছুঁড়ে মারে। ফলে কপাল কেটে রক্ত বের হয়ে যায়। রাগের মাথায় জেন তাকে আচড়ে দেয়। মিসেস রীড তাকে শাস্তি হিসেবে উপর তলার রেড রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে, যেখানে তার মামা মি. রীড (Mr. Reed) মারা গিয়েছিলেন। জেন এর মনে এই বিশ্বাস ছিল যে, তাঁর মামার আত্মা এই ঘরে ঘুরে বেড়ায়। রাতে সে প্রচণ্ড ভয় পায় ও অজ্ঞান হয়ে যায়। যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন সে দেখে তার পাশে দয়ালু ডাক্তার জনাব লয়েড (Mr. Lloyd) ও মিস বেসি বসে আছেন। জেন এর মামী ও তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ায় জনাব লয়েড, জেন এর সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার সুযোগ পান। জেন এর মুখে সবকিছু শুনে তিনি মিসেস রীডকে পরামর্শ দেন, জেন এর আসলে গেটশেড ভালো লাগছে না । তাকে দূরের কোন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলে ভালো হয় ।
জেনের স্কুল জীবন শুরু: জেনকে লোউড (Lowood) স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এই স্কুলের পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব ব্রকলহার্স্ট (Mr. Brocklehurst) একজন নিষ্ঠুর, অভদ্রভাষী ও দ্বিমুখী চরিত্রের অধিকারী ব্যাক্তি। সে স্কুলের শিক্ষকদের বলতেন মেয়েদেরকে খাবার কম দিতে যাতে তাঁরা পূর্বের ঈশ্বরভক্ত শহীদ ব্যাক্তিদের মত কষ্টসহিঞ্চু হতে পারে। কিন্তু অনুদানের টাকায় তিনি ও তার পরিবার নিয়ে সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতেন। লোউড স্কুলে জেন দুইজন শুভাকাঙ্ক্ষী লাভ করে। একজন হল তার বন্ধু মিস হেলেন বার্নস (Helen Burns) ও আর একজন তাদের শিক্ষিকা মিস মারিয়া টেম্পল (Miss Maria Temple)। লোউড স্কুলে ক্ষুধা, অনাহার, তীব্র শীতের কষ্ট থাকলেও মিসেস রীডে ও তার ছেলের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে জেন এর জীবনে একটা স্বাভাবিকতা ফিরে আসে। কিন্তু একসময় শীতের প্রকোপ আঘাত হানে লোউড স্কুলে। টাইফাস (Typhus) এর আক্রমনে তার প্রাণের বান্ধবী হেলেনসহ স্কুলের প্রায় ৩০ জনের মতো ছাত্রী মারা যায়। এতে এলাকার মানুষের টনক নড়ে। ধনী ব্যাক্তিরা বড় অঙ্কের অনুদান সংগ্রহ করে স্কুলের ব্যাবস্থাপনা ঢেলে সাজায়। জেন এখানে প্রায় ৬ বছর শিক্ষার্থী হিসেবে থাকে। পরে আর দুই বছর এখানেই শিক্ষকতা করে। মিস টেম্পলের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় জেনের এখানে আর মন বসে না। সে পত্রিকায় শিক্ষকতার চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়।
জেনের শিক্ষকতা এবং প্রেমময় জীবনের শুরু: প্রায় সপ্তাহ দুয়েক পরে থর্নফিল্ড (Thornfield Hall) থেকে একটি চিঠি আসে। অ্যাডেল (Adèle Varens) নামে একটি ফরাসী বাচ্চা মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে হবে। অ্যাডেলের প্রাথমিক পরিচয় হল বাড়ির মালিক জনাব রচেস্টার (Edward Rochester) তাকে দত্তক নিয়েছেন। তবে আরেকটি কথা শোনা যায় যে, তার মা সেলিনের (Celine Varens) সাথে জনাব রচেস্টারের প্রেম ছিল। যখন রচেস্টার খেয়াল করে সেলিন এর তার টাকার প্রতি লোভ এবং অবিশ্বস্থ একজন মহিলা, তখন সে অ্যাডেলকে নিয়ে চলে আসে। জেন থর্নফিল্ড গেলে সে স্থানটি তার মনে ধরে যায়। তার ছাত্রী অ্যাডেল এবং বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মিস ফেয়ারফ্যাক্স (Mrs Fairfax) দুজনকেই তার খুব ভালো লাগে। মাস তিনেক পরে জেন একদিন নদীর ধারে ঘুরতে গেলে তার সাথে জনাব রচেস্টারের দেখা হয়ে যায়। জেন মনে মনে তাকে ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু বলতে সাহস পায় না ।
একদিন রাতে জেন একটা চিৎকার শুনে বাহিরে বের হয়ে প্রথমে কিছু দেখতে পায় না। জনাব রচেস্টারের ঘরের পাশে গেলে দেখে তার ঘরের ভিতরে আগুন লেগে রয়েছে। মরার মত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন জনাব রচেস্টারকে তিনি ডেকে তুলে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করেন। রচেস্টার তাকে জানায় আগুনটা সম্ভবত গ্রেস পুল (Grace Poole) নামে একজন কাজের লোক লাগিয়েছে। কিন্তু গ্রেস পুল বাড়িতে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দেখে জেন বুঝতে পারল, সেদিন রাতে জনাব রচেস্টার ভিতরের পুরো কাহিনী তাকে জানায়নি। এরপর যখন জনাব রচেস্টার বাড়িতে ব্ল্যাঞ্চ ইনগ্রাম (Blanche Ingram) নামে একজন অর্থলোভী মহিলাকে নিয়ে এলেন, জেন হতাশায় ডুবে গেল । একদিন রাতে জ্যামাইকা থেকে জনাব ম্যাসন (Mr. Mason) নামে একজন লোক এলো। তার উপস্থিতিতে জনাব রচেস্টার বিরক্ত হলেন কিন্তু তার সাথে ঘরে দীর্ঘক্ষন আলাপের পরে একসময় খুশি মনেই তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
রাতের বেলা হঠাৎ চিৎকার শুনে বেরিয়ে এলো জেন। বাড়ির অন্যরা টের পায়নি। জনাব রচেস্টার জেনকে উপরের একটা ঘরে নিয়ে গেলে। যেখানে মি. ম্যাসন আহত অবস্থায় পড়েছিল। মি. রসচেস্টার তাকে বলল মি. ম্যাসন এর আঘাতপ্রাপ্ত শরীরে স্পঞ্জ ধরে রাখতে। তিনি দু ঘন্টার মাঝে ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসলেন। রাত পোহাবার আগেই তিনি মি. ম্যাসনকে ডাক্তারের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। এখানেও জনাব রচেস্টার জেনকে খোলাসা করে কিছু বলেনি ।
অসুস্থ মামীকে দেখতে জেন গেটশেডে যান: কয়েকদিন পরে তাদের বাসায় মীসেস রীডের পরিচারিকা বেসীর স্বামী লীভেন (Leaven) আসে ও তাকে জানায় মিসেস রিড তাকে দেখতে চেয়েছেন। তিনি এখন শয্যাশায়ী। জেন তখন এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে গেটশেডের দিকে যাত্রা করে। মিসেস রীডের কাছে গেলে সে জানায় সে এখনো জেনকে ঘৃণা করে। আরো জানতে পারে জন রীড মদ আর জুয়ার মাধ্যমে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলেছে। শেষবার এসে তার মায়ের থেকে সমস্ত সম্পত্তি লিখিয়ে নিতে চেয়েছিল। এর কিছুদিন পরে লন্ডনে সে মারা গিয়েছে। ৫ম সপ্তাহে মিসেস রীড জেনকে ডাকলেন। তাকে জানালেন, তার এক চাচা আছে নাম জন আয়ার (John Eyre)। তার একটা চিঠি তাকে দিলেন। যেটা তিন বছর আগে মিসেস রীড পেয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন তার চাচাকে তিনি জানিয়েছেন, টাইফাস জ্বরে জেন এর মৃত্যু হয়েছে। সেদিনই তার মামী মৃত্যু বরন করে।
থর্নফিল্ডে ফিরে এসে রোচেস্টারের প্রস্তাব পান: থর্নফিল্ডে ফিরে এসেই সে রোচেস্টারের প্রস্তাব পায়। জনাব রচেস্টার তাকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। জেনের বিশ্বাস হয় না। তখন তিনি বলেন আসলে জেন এর ভিতরে ঈর্শা জাগানোর জন্যেই মূলত ব্লানশে ইনগ্রামকে এ বাড়িতে আনা হয়েছিল। যেদিন জেনকে প্রথম দেখেছিলেন, সেদিনই তিনি তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন। জেনও তাকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। ঠিক হয়ে পরের মাসেই তাদের বিয়ে। বিয়ের আসরে তাঁরা যখন শপথ নিবে, এসময় মি. ম্যাসন ও আইনজীবী মি. ব্রিগস (Mr. Briggs) এসে চিৎকার করে বলে যে, জনাব রচেস্টারের একজন বউ আছে যার নাম বার্থা ম্যাসন (Bertha Mason)। মি. ম্যাসন দাবি করে যে, সে বার্থা ম্যাসনের ভাই। এটা শুনে অবশ্য মি. রচেস্টার তার দাবী অস্বীকার করে না। পরে তাদের সবাইকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দেখায় যে, বার্থা আসলে পাগল। যে ঘরের ভিতরে পাগলামী করছিল, এদিক সেদিক পাগলের মত ছোটা-ছুটি করছিল।
পরে রচেস্টার তাকে জানায়, তরুণ বয়সে তার বাবা তাকে ধনী বানানোর জন্যে তাকে এক ধনকুবেরের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন, যদিও তিনি জানতেন মেয়েটা (বার্থা ম্যাসন) আসলে একটা পাগল। থর্নফিল্ডের তৃতীয় তলায় রচেস্টার তাকে বন্দী করে রাখতেন এবং গ্রেস পুলকে তার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আসলে সেই রহস্যময় আগুন লাগার আসল কারন ছিল বার্থা।
জেনের বিয়ে হয় এবং তিনি তার আত্মীয়দের খুঁজে পান এবং উপন্যাসের সমাপ্তি ঘটে: কিছুদিন পরে মনের কষ্ট নিয়ে জেন প্রায় খালি পকেটে থর্নফিল্ড ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। পকেটে মাত্র ২০ শিলিং। মার্শ এন্ড (Marsh End) এ পৌছালে তার পয়সা শেষ হয়ে যায়। সেখানে নেমে খাবার ভিক্ষা করে কিন্তু তাকে কেউ ভিক্ষাও দেয় না। অবশেষে মুর হাউজে (Moor House) তার আশ্রয় হয়। জেন আয়ার নিজের নাম জেন ইলিয়ট (Jane Elliott) বলে তাদের কাছে পরিচয় দেয়। সেখানে সে বাড়িতে মেরি (Mary), ডায়ানা (Diana) ও সেইন্ট জন রিভার্স (St. John Rivers) এর সাথে তার ভালো খাতির হয়ে যায়। জন ছিল একজন পাদ্রী। সে জেনকে মরটনে (Morton) একটি অবৈতনিক বিদ্যালয়ে চাকরি খুজে দেয়। একদিন জন তাকে জিজ্ঞাসা করে লোউড স্কুলের জেন আয়ার নামে কাউকে সে চিনে কিনা। জেন আয়ারের চাচা জনাব জন আয়ার মৃত্যুর আগে তার জন্যে ২০০০০ পাউন্ড রেখে গিয়েছে। জেন তখন নিজের আসল পরিচয় দেয়। তার জন্যে আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। জন রিভার্সরা হলো তার ফুপাতো ভাই ও বোন। জেন তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে তার তিন আত্মীয়কে ১৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে দেয়।
এই অর্থ লাভ করার পর জন রিভার্স ভারতে একজন মিশনারী হিসেবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং জেনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু জেন তার প্রস্তাবে রাজী হয় না কারন সে এখনো মি. রচেস্টারকে ভালোবাসে। সে আরো ভাবতে থাকে। এক রাতে তার কাছে মনে হলো যেনো মি. রচেস্টার তাকে ডাকছেন। তড়িৎ সিদ্ধান্তে সে থর্নফিল্ডে যায় এবং সেখানে গিয়ে দেখে থর্নফিল্ড নামক বাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। মি. রচেস্টার এর পাগল স্ত্রী বার্থা ম্যাসন আগুন লাগিয়েছে এবং এর সাথে সে নিজেও পুড়ে মারা গেছে।
রচেস্টার তার পরিচারিকা ও কাজের লোকদের বাচাতে পেরেছেন কিন্তু এর সাথে নিজের দৃষ্টিশক্তি ও এক হাতের কর্মশক্তি হারিয়েছেন। রচেস্টার তখন ফার্নাডিনে ছিলেন (Ferndean কোনো বড় বাড়ি নয়, বরং একটি অন্ধকার, নিস্তব্ধ, আর জনমানবহীন প্রাসাদ)। জেন সেখানে যান এবং অন্ধ ও এক হাতের কর্মশক্তিহীন রচেস্টারকে বিয়ে করেন। জেন যখন এই অটোবায়োগ্রাফী লিখছিলেন, তখন তারা দুজনে একসাথে ১০ টি আনন্দময় বছর পার করেছেন। স্কুল থেকে এডেলকেও জেন বাসায় নিয়ে আসে। দুই বছরের মাথায় রচেস্টার তার এক চোখে কিছুটা আলো ফিরে পেয়েছেন ও তাদের সদ্যজাত সন্তানকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
Jane Eyre Bangla Summary Details
Chapter 1, অধ্যায় ১ – গেটসহেড: জেন আয়ার ও রেড-রুম
এক মলিন বিকেলে গেটসহেড হলে দশ বছরের জেন আয়ার একা বসে থাকে। তার মামি মিসেস রিড তাকে তিন মামাতো ভাইবোনের সঙ্গে খেলতে নিষেধ করায় সে জানালার পর্দাঘেরা কোণে বসে History of British Birds বই পড়ছিল। বইয়ের ছবিতে তার কল্পনায় জন্ম নেয় অজানা গল্প ও আর্কটিক দৃশ্য। এমন সময় মামাতো ভাই জন রিড এসে তাকে অপমান করে। সে জেনকে ভিখারিনী, এতিম ও দাসী বলে কটূক্তি করে এবং এক ভারী বই দিয়ে আঘাত করে। জেন প্রথমবারের মতো প্রতিবাদ করে এবং তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। আঘাতে হতবুদ্ধি হয়ে জন কান্না করতে করতে মায়ের কাছে দৌড়ে যায়। কিন্তু মিসেস রিড সব দোষ জেনের উপর চাপিয়ে দেয় এবং শাস্তিস্বরূপ তাকে রেড-রুমে পাঠায়। রেড-রুম ছিল একটি সুন্দর অথচ পরিত্যক্ত কক্ষ, যেখানে নয় বছর আগে জেনের মামা মৃত্যুবরণ করেছিলেন। সেই অন্ধকার ও ভয়ের ঘরটি ছোট্ট জেনের জন্য যন্ত্রণা ও আতঙ্কের প্রতীক হয়ে ওঠে।
Chapter 2, অধ্যায় ২ – রেড-রুমে ভীতি ও শাস্তি
দুই পরিচারিকা বেসি লি ও মিস অ্যাবট জোর করে চিৎকার করতে থাকা জেনকে ওপরতলায় টেনে নিয়ে যায়। তারা জেনকে বকাঝকা করে, কারণ সে নাকি খালা মিসেস রিড-এর প্রতি অসম্মান দেখিয়েছে। তারা তাকে মনে করিয়ে দেয়, জেনের জীবন নির্ভর করছে মিসেস রিডের দয়ার উপর। নইলে তাকে পাঠানো হতো দারিদ্র্যপীড়িত ওয়ার্কহাউসে। শাস্তি হিসেবে তারা জেনকে একা বন্দি করে রাখে রেড-রুমে। আয়নায় নিজের ক্লান্ত, কৃশ দেহের প্রতিচ্ছবি দেখে জেনের মন গভীর দুঃখে ভরে ওঠে। গেটসহেড হলে সে সবসময় অপমানিত ও শাস্তিপ্রাপ্ত, অথচ রিড সন্তানরা পায় সব সুবিধা—এই অবিচারের কথা ভেবে সে কষ্টে কাঁদে।
সে স্মরণ করে দয়ালু মিস্টার রিড-কে, যিনি মৃত্যুর আগে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যেন জেনকে নিজের সন্তানের মতো লালন করা হয়। জেন ভাবতে থাকে মৃতদের কথা। অন্যায় হলে তারা প্রতিশোধ নিতে ফিরে আসতে পারে—এই ধারণা তার মনে ভেসে ওঠে। হঠাৎ সে অনুভব করে, রেড-রুমে মিস্টার রিডের আত্মা উপস্থিত। আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে জেন। দরজা খোলা হয়, কিন্তু মিসেস রিড তার কথা বিশ্বাস করে না এবং বের হতেও দেয় না। আবারও তালাবদ্ধ হয়ে, ভয় ও অন্ধকারে কাবু হয়ে জেন অচেতন হয়ে পড়ে।
Chapter 3, অধ্যায় ৩ – বেসির যত্ন ও মিস্টার লয়েডের আগমন
অচেতন জেন জেগে ওঠে। তার যত্ন নিচ্ছে স্নেহময়ী বেসি এবং স্থানীয় ঔষধ বিক্রেতা মি. লয়েড। বেসি মনে করে মিসেস রিড জেনের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছে। সে জেনের সেবা করে, গান গেয়ে শোনায়, তবুও জেন থাকে বিষণ্ন। জেন কেবল শান্তি পায় যখন হাতে আসে একটি বই—জোনাথন সুইফটের Gulliver’s Travels। সেই বইকে সে সত্যিকারের দূরদেশের কাহিনি মনে করে আনন্দ পায়। ধীরে ধীরে সুস্থ হলে মি. লয়েড জেনকে তার সুখ-দুঃখ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। জেন স্বীকার করে, পরিবার না থাকায় সে দুঃখী ও একা। তবে সে ভিখারি হয়ে বাঁচতে চায় না। যদি এই পরিবার থেকেও গরিব সে হতো, তবুও সে তাদের সঙ্গে থাকতে চাইত না। মি. লয়েড প্রস্তাব দেন, জেন কি স্কুলে যেতে চায়? জেন খুশি মনে রাজি হয়। মিসেস রিড অনুমতি দেয়, কারণ এতে ভাগ্নিকে বিদায় দেওয়ার সুযোগ পায় সে।
পরে জেন শোনে বেসি মিস অ্যাবট-কে বলছে তার পরিবারের কথা। জেনের বাবা ছিলেন এক দরিদ্র যাজক। মা ছিলেন ধনী রিড পরিবারের কন্যা। ধনী পরিবারের অমতে তিনি বিয়ে করেছিলেন। তাই তাকে পরিবার ত্যাগ করে। জেন জন্মের পরপরই বাবা গরিবদের সেবা করতে গিয়ে টাইফাসে আক্রান্ত হন। কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান মা-বাবা দুজনেই। তখন দয়ালু মি. রিড জেনকে দত্তক নেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে স্ত্রী মিসেস রিড-কে বলেছিলেন—জেনকে যেন নিজের সন্তানদের মতো করে মানুষ করা হয়—জন, এলিজা ও জর্জিয়ানা-র সঙ্গে।
Chapter 4, মিস্টার ব্রকলহার্স্টের গেটসহেড ভিজিট
দুই মাস ধরে জেন আয়ার অস্থির মনে অপেক্ষা করে স্কুলে যাওয়ার দিনের জন্য। অবশেষে তার সাক্ষাৎ হয় মি. ব্রকলহার্স্ট-এর সঙ্গে, যিনি লোউড স্কুলের কঠোর ও গম্ভীর প্রধান শিক্ষক। তিনি জেনকে ধর্ম নিয়ে বক্তৃতা দেন, বিশেষ করে নিয়মিত ও ধারাবাহিক জীবনের গুণের কথা শোনান। সাক্ষাৎকারের সময় মিসেস রিড মিথ্যা অভিযোগ তোলে যে জেন একজন মিথ্যাবাদী। মি. ব্রকলহার্স্ট প্রতিশ্রুতি দেন যে, এই কথা তিনি শিক্ষকদের জানাবেন। মিসেস রিডের এই অন্যায়ের কারণে জেন গভীরভাবে কষ্ট পায়। হঠাৎ সে ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং মামিকে বলে ফেলে—সে নিষ্ঠুর, প্রতারক এবং তার প্রতি অন্যায়কারী।
জেনের সাহসী কথায় মিসেস রিড স্তম্ভিত হয়ে যায়। এই প্রথম মিসেস রিড নীরব ও পরাজিত বোধ করে। পরে জেন নিজের মধ্যে এক অদ্ভুত উত্তেজনা অনুভব করে—আবার ভয়ও পায় তার নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ দেখে। গেটসহেডে বাকি সময়টুকু রিড পরিবার জেনকে অবহেলা করে যায়। তবে সে নতুনভাবে সাহসী ও খোলামেলা হয়ে ওঠে বেসি-র সঙ্গে। বেসি তাকে গল্প শোনায়, মিষ্টি খেতে দেয় এবং স্বীকার করে যে, সে জেনকে রিড বাচ্চাদের চেয়ে বেশি পছন্দ করে।
Chapter 5, লোউড ইনস্টিটিউশনে জেনের যাত্রা
চার দিন পর এক শীতল জানুয়ারির সকালে জেন আয়ার বিদায় নেয় গেটসহেড থেকে। গাড়ির দীর্ঘ যাত্রা শেষে সে পৌঁছে যায় এক নিরানন্দ, ভুতুড়ে চেহারার স্থানে—লোউড স্কুলে। এটি ছিল অনাথ কন্যাদের জন্য দাতব্য বিদ্যালয়। এখানে সব মেয়েই ধূসর রঙের রুক্ষ ইউনিফর্ম পরে। প্রথম দিনেই জেন কঠোর নিয়মকানুনের পরিবেশ দেখে। শিক্ষিকারা ছাত্রীদের সারিবদ্ধভাবে হাঁটায়, কঠোর আদেশ দেয়। লম্বা ডরমিটরিতে মেয়েরা একসঙ্গে শুয়ে থাকে। খাবার অল্প, অনেক সময় খাবার ছিল অখাদ্য।
তবে বিদ্যালয়ের সুপারিনটেনডেন্ট মিস মারিয়া টেম্পল এগিয়ে এসে কিছুটা ভালো খাবারের ব্যবস্থা করেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ও পড়ান। জেন তার সদয় ব্যবহার ও জ্ঞানের জন্য গভীর শ্রদ্ধা অনুভব করে। এই সময় জেন লক্ষ্য করে একা বসে পড়ছে এক মেয়ে—হেলেন বার্নস। সেও অনাথ। জেন অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলতে অভ্যস্ত নয়। কিন্তু হেলেনকে দেখেই তার মনে হয় যেন পুরোনো পরিচিত। জেন প্রশ্ন করতে থাকে—বিদ্যালয়, শিক্ষিকা, আর মি. ব্রকলহার্স্ট সম্পর্কে। হেলেন শান্তভাবে, ভদ্রভাবে সব উত্তর দেয়।
Chapter 6, হেলেন বার্নস ও মিস টেম্পল
লোউড স্কুলে দ্বিতীয় দিনে জেন আয়ারের ভোরে ঘুম ভাঙে কাঁপতে কাঁপতে। সকালের নাশতা খুবই অল্প এবং নিরানন্দ। ধোয়ার পানিও জমে গেছে কলসিতে। ক্লাসে বসে জেন পড়াশোনায় বিভ্রান্ত হয়, কিন্তু তার চোখ আটকে থাকে হেলেন বার্নস-এর দিকে। হেলেন সহজেই কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেয়। তবুও শিক্ষক মিস স্ক্যাচার্ড তার বারবার দোষ খোঁজে এবং শাস্তি দেয়। একসময় তিনি হেলেনের ঘাড়ে চাবুক মারেন। জেন বিস্ময়ে দেখে—হেলেন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না, চোখে জলও আসে না। পরে জেন হেলেনকে বলে, এমন অন্যায় সহ্য করা উচিত নয়। তার উচিত ক্ষোভে প্রতিরোধ করা। কিন্তু হেলেন শান্ত কণ্ঠে নিজের দর্শন ব্যাখ্যা করে। তার মতে, যদি কেউ অন্যায় করেও, পাল্টা রাগ বা প্রতিশোধ নিলে তুমি নিজেও অন্যায় করবে। বরং সব কষ্ট চুপচাপ সহ্য করলে, ঈশ্বর একদিন এর প্রতিদান দেবেন। এই পৃথিবীর কষ্টকে সে সহ্য করে কারণ সে আশা রাখে এক সুন্দর পরজীবনের। এই বিশ্বাসই তাকে ধৈর্য ও সহনশীলতা দিয়েছে।
Chapter 7, মিস্টার ব্রকলহার্স্টের ভণ্ডামি
লোউড স্কুলে জীবন ক্রমেই কঠিন হতে থাকে। রবিবারে মেয়েরা হেঁটে যায় মি. ব্রকলহার্স্ট-এর চার্চে। পাতলা পোশাকে তারা প্রচণ্ড শীতে কাঁপে। সবসময় ঠান্ডা আর ক্ষুধার কষ্টে ভুগতে থাকে। সহানুভূতিশীল জেন আয়ার নিজের অল্প খাবারও দিয়ে দেয় অন্য ক্ষুধার্ত মেয়েদের। একদিন হঠাৎ লোউডে আসেন মি. ব্রকলহার্স্ট। তার সঙ্গে থাকে ধনী ও জমকালো পোশাক পরা আত্মীয়রা। সবার সামনে তিনি আবার কঠোর নিয়মকানুন জোর দিয়ে বলেন মিস টেম্পল-কে। দয়ালু মিস টেম্পল মেয়েদের জন্য নিয়ম ভেঙে একটু স্বস্তি দিতেন, কিন্তু এবার তিনি নীরবে রাগ সামলান।
ব্রকলহার্স্ট এক ছাত্রীর কোঁকড়ানো লালচে চুল দেখে আদেশ দেন—সব মেয়ের চুল কেটে ফেলতে হবে, নম্রতা বজায় রাখার জন্য। এই দৃশ্য দেখে ভয়ে কেঁপে ওঠে জেন। তার মনে পড়ে মামির অভিযোগ—সে নাকি মিথ্যাবাদী। হয়তো এখন সবাই তা জানবে। আতঙ্কে জেন হাত ফসকে ফেলে দেয় তার চক-স্লেট। তৎক্ষণাৎ ব্রকলহার্স্ট জেনকে দাঁড় করান উঁচু স্টুলের ওপর। সবার সামনে ঘোষণা করেন—জেন আয়ার প্রতারক ও মিথ্যাবাদী। তিনি নির্দেশ দেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ যেন তার সঙ্গে না মিশে। অপমানে ভেঙে পড়ে জেন। কিন্তু ঠিক তখনই হেলেন বার্নস পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় মৃদু হাসি দেয় জেনকে। সেই হাসিই তার একমাত্র সাহস আর সান্ত্বনা হয়ে ওঠে।
Chapter 8, মিস টেম্পলের দয়া
সন্ধ্যায় স্কুল ছুটি হওয়ার পর ভেঙে পড়ে জেন আয়ার। তার মনে হয়, সবাই তাকে ঘৃণা করছে। কাঁদতে কাঁদতে সে দুর্বল হয়ে গেল ও মনোবলহারা হয়ে পড়ে। তখন এগিয়ে আসে হেলেন বার্নস। হেলেন তাকে সান্ত্বনা দেয়। সে বলে, সহপাঠীরা জেনকে ঘৃণা করে না, বরং দয়া করে। আর যদি সারা পৃথিবী তাকে অবজ্ঞা করে, তবুও বিশ্বাসের ভেতরে জেন খুঁজে পাবে বন্ধুত্ব আর সুরক্ষার ভালোবাসা। সেই রাতে মিস টেম্পল দুই মেয়েকে নিজের অফিসে ডাকেন। তিনি চা আর কেক খাওয়ান। জেন সাহস করে তাকে নিজের জীবনকথা বলে। জানায়, সে মিথ্যাবাদী নয়। কথা বলার সময় সে চেষ্টা করে নম্র থাকতে। জেন বিস্ময়ে দেখে—মিস টেম্পল ও হেলেন বিদ্যা ও পবিত্রতায় যেন আলো ছড়াচ্ছে।
মিস টেম্পল প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি মি. লয়েড-কে লিখবেন সত্য জানার জন্য। কিছুদিনের মধ্যেই চিঠি আসে। মি. লয়েড জানিয়ে দেন, জেন সত্যিই নির্দোষ। এরপর মিস টেম্পল পুরো স্কুলের সামনে ঘোষণা করেন—জেন আয়ার মিথ্যাবাদী নয়। এই স্বীকৃতির পর জেন নতুন উদ্যমে পড়াশোনায় মন দেয়। সে ফরাসি ভাষা ও অঙ্কনে সবার থেকে ভালো করতে শুরু করে। এখন গেটসহেডের বিলাসিতা নয়, দরিদ্র লোউড স্কুলই তার কাছে হয়ে ওঠে আশ্রয় ও গর্বের স্থান।
Chapter 9, টাইফাস জ্বর ও হেলেনের মৃত্যু
বসন্ত এলো, আবহাওয়া হলো সুন্দর। কিন্তু লোউড স্কুলের স্যাঁতসেঁতে মাঠে ছড়িয়ে পড়ল ভয়ঙ্কর টাইফাস মহামারী। অর্ধেকের বেশি ছাত্রী আক্রান্ত হলো। অনেককেই বাড়ি পাঠানো হলো। অনেকে মৃত্যুবরণ করলো। এই সময়ে জেন আয়ার-কে বলা হলো বাইরে সময় কাটাতে, যাতে তার স্বাস্থ্য ভালো হয়। সবুজ মাঠ আর ফুল দেখে তার মন আনন্দে ভরে ওঠে। কিন্তু প্রকৃতির নবজাগরণের মাঝেই সে প্রথমবার ভাবে মৃত্যু নিয়ে।
শিগগিরই জেন জানতে পারে—হেলেন বার্নস মৃত্যুশয্যায়। তবে তার রোগ টাইফাস নয়, বরং ক্ষয়রোগ (টিবি)। তাকে আলাদা রাখা হয়েছে মিস টেম্পল-এর ঘরে। এক রাতে জেন গোপনে গিয়ে হেলেনের বিছানার পাশে বসে। হেলেন শান্ত কণ্ঠে বলে, মৃত্যুকে সে ভয় পায় না। কারণ মৃত্যুর পর সে এই পৃথিবীর কষ্ট ছাড়িয়ে যাবে এবং ঈশ্বরের কাছে যাবে। জেন আর হেলেন আলিঙ্গন করে ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরে হেলেনের নিঃশ্বাস থেমে যায়। হেলেন বার্নস-কে দাফন করা হয় এক নামহীন কবরস্থানে। তবে পনেরো বছর পর কেউ (সম্ভবত জেন) সেই কবরের ওপরে একটি পাথর বসায়। সেখানে খোদাই করা থাকে ল্যাটিন শব্দ—“Resurgam” অর্থাৎ “আমি আবার উঠব”।
Chapter 10, লোউডে শিক্ষক হিসেবে জেন
লোউড স্কুলে মহামারী আর মৃত্যুর ফলে প্রকাশ পেল ভেতরের দুর্নীতি। মি. ব্রকলহার্স্ট-এর অবহেলা সবাই বুঝতে পারল। নতুন পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব নিল, এবং ধীরে ধীরে স্কুলের পরিবেশ ভালো হয়ে গেল। এভাবে কেটে গেল আট বছর। এই সময়ে জেন আয়ার পড়াশোনায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখায়। শিক্ষকদের খুশি করার তাগিদে সে প্রথম হয় পরীক্ষায়। এরপর সে নিজেই লোউডে শিক্ষকতা শুরু করে।
তবে একদিন মিস টেম্পল বিয়ে করে দূরে চলে গেলে, জেনের মন ভেঙে যায়। তারও মনে হয় নতুন জীবনের ডাক এসেছে। সে চায় বাইরের জগতে গিয়ে এক নতুন দায়িত্ব নিতে। তাই সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেয় টিউটরের কাজের জন্য। এক সপ্তাহ পর আসে উত্তর—মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স তাকে কাজের প্রস্তাব দেন। জেনকে যেতে হবে থর্নফিল্ড ম্যানর-এ, যেখানে সে পড়াবে এক ছোট্ট মেয়েকে।
ঠিক বিদায়ের মুহূর্তে হঠাৎ দেখা করতে আসে বেসি। সে জানায় রিড পরিবার-এর খবর। জর্জিয়ানা পালাতে চেয়েছিল এক তরুণ লর্ডের সঙ্গে, কিন্তু ঈর্ষান্বিতা বোন এলিজা সব ফাঁস করে দেয় মিসেস রিডকে। এদিকে জন রিড পড়াশোনায় ব্যর্থ, অর্থ অপচয় করছে, আর মাকে হতাশ করছে। বেসি শেষে বলে, জেন এখন অনেক বেশি গুণী, প্রতিভাবান এবং সফল—রিড সন্তানদের থেকেও অনেক উঁচুতে।
Chapter 11, থর্নফিল্ড হলে আগমন
রাতের অন্ধকারে পৌঁছাল জেন আয়ার থর্নফিল্ড হলে। অন্ধকারে বাড়ির বাইরের চাকচিক্য ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেল না। তাকে স্বাগত জানালেন দয়ালু বৃদ্ধা মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স। তিনি বিশাল অট্টালিকা পেরিয়ে জেনকে নিয়ে গেলেন এক আরামদায়ক ঘরে। অল্প সময়েই জেন বুঝল, মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স বাড়ির মালকিন নন। তিনি আসলে প্রধান গৃহপরিচারিকা। আসল মালিক হলেন মি. রচেস্টার, যিনি খুব কমই এখানে থাকেন। মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স জানান, রচেস্টার অদ্ভুত স্বভাবের হলেও ভ্রমণপিপাসু ও দয়ালু মনিব।
পরদিন জেনের পরিচয় হয় তার ছাত্রী অ্যাডেল ভারেন্স-এর সঙ্গে। চঞ্চল ফরাসি এই মেয়ে এক গায়িকা ও নৃত্যশিল্পীর কন্যা। এখন সে রচেস্টারের আশ্রিত সন্তান। পরে মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স জেনকে নিয়ে যান বাড়ি ঘুরে দেখাতে। নিচের তলা ছিল বিলাসবহুল আসবাবে ভরা। কিন্তু তৃতীয় তলা অন্ধকার, পুরনো আসবাব আর অতীতের ফেলে দেওয়া জিনিসে ঠাসা। জেনের মনে হলো, এ জায়গা ভূতের জন্য যথেষ্ট রহস্যময়। ঠিক তখনই ওপরে ভেসে এল অদ্ভুত হাসির শব্দ। ভয় পেয়ে গেল জেন। মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স ব্যাখ্যা করলেন—ওটা গ্রেস পুল-এর হাসি। তিনি একজন দর্জি ও চাকরানি। মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স তাকে বকাঝকা করলেন এবং সাবধান করলেন নির্দেশ মনে রাখতে।
Chapter 12, রচেস্টারের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ
ধীরে ধীরে জেন আয়ার অভ্যস্ত হয়ে উঠল থর্নফিল্ডের জীবনে। সে আনন্দ পায় চঞ্চল কিন্তু আদুরে অ্যাডেল-এর সঙ্গে। তবুও তার মনে দমবন্ধ অশান্তি। সে ভাবে, সমাজ ভুলভাবে মানুষকে ভূমিকার মধ্যে আটকে রাখে—বিশেষত নারীকে। মানুষের সবারই দরকার উদ্দীপনা ও স্বাধীনতা। কখনও কখনও জেন সান্ত্বনা পায় তৃতীয় তলার অন্ধকার করিডরে হাঁটতে গিয়ে। সেখানে দাঁড়িয়ে কল্পনার ডানায় ভেসে যায়। প্রায়ই সে শোনে অদ্ভুত হাসির শব্দ। বারবার দেখে গ্রেস পুল-কে এদিক-ওদিক যেতে। কিন্তু তার সাধারণ, রুক্ষ স্বভাবকে অদ্ভুত হাসির সঙ্গে মেলাতে পারে না জেন।
এক শীতের সন্ধ্যায় জেন একটি চিঠি ডাকঘরে দিতে বেরোয়। দূর থেকে শোনে ঘোড়ার শব্দ। গম্ভীর দৃশ্য দেখে তার মনে পড়ে বেসি-র ভূতের গল্প—ভয়ঙ্কর আত্মা “গাইট্রাশ”, যা কখনও ঘোড়া, কখনও কুকুর হয়ে ভ্রমণকারীদের তাড়া করে। হঠাৎ সত্যিই বেরিয়ে আসে বিশাল এক কুকুর। ভয় পায় জেন। কিন্তু সাথে সাথেই দেখা যায় ঘোড়া ও আরোহী, যা তার ভয় দূর করে। তবুও বরফে পিছলে পড়ে যায় ঘোড়া। আরোহী পড়ে যায় মাটিতে। জেন সাহায্য করে তাকে উঠতে। সেই কঠিন দৃষ্টির, গম্ভীর পুরুষ তাকে জিজ্ঞেস করে থর্নফিল্ডে তার অবস্থান সম্পর্কে। তারপর ঘোড়ায় চড়ে চলে যায়। ফিরে এসে জেন শোনে চাকরদের মুখে। সেই অচেনা মানুষটি আর কেউ নয়—এডওয়ার্ড রচেস্টার, থর্নফিল্ড হলের প্রকৃত মালিক, যিনি অবশেষে ফিরে এসেছেন।
Chapter 13, অঙ্কনকক্ষ ও ভবিষ্যৎবক্তা (বেশ বদলে রচেস্টার)
পরদিন সন্ধ্যায় জেন আয়ার ও অ্যাডেল যোগ দিল মি. রচেস্টার-এর সঙ্গে চায়ের আড্ডায়। রচেস্টার ছিলেন গম্ভীর ও অমনোযোগী। তিনি আদেশের মতো কথা বলতেন, কখনও রূঢ় ভঙ্গিতে। আলোচনায় আসে অ্যাডেলের পড়াশোনা আর জেনের ব্যক্তিগত জীবন। রচেস্টার জানতে পারেন, জেন ছবি আঁকতে পারে। কৌতূহলী হয়ে তিনি দেখতে চান তার কাজ। জেনের ছবিতে ফুটে ওঠে মহিমান্বিত অথচ নিঃসঙ্গ দৃশ্য—একটি ভেঙে পড়া সাগরে ডুবে যাওয়া মানুষ, ঝড়ো মেঘের পেছনে আলোকিত মুখ, আর বরফাচ্ছন্ন হিমশৈলের পাশে অন্ধকারময় মৃত্যুদূত। এসব ছবি দেখে রচেস্টার গভীরভাবে আকৃষ্ট হন।
সন্ধ্যার আড্ডা শেষে জেন মিসেস ফেয়ারফ্যাক্সকে বলেন, তিনি রচেস্টারকে অমায়িক নন, বেশ রূঢ় মনে করেন। তখন মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স ব্যাখ্যা করেন—রচেস্টারের চরিত্র জটিল, কারণ তার অতীত ভরা কষ্টে। তিনি জানান, রচেস্টার নয় বছর আগে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে থর্নফিল্ড পেয়েছিলেন। এর আগে তাদের বাবা পুরো সম্পত্তি দিয়েছিলেন বড় ভাইকে। তবে ছোট ছেলে এডওয়ার্ড রচেস্টার-কেও ধনী করার জন্য তিনি এক জটিল পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, আর আজও সেটি রচেস্টারের জীবনে যন্ত্রণার কারণ। তবুও মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চান না। রহস্য থেকে যায় অমীমাংসিত।
আরো পড়ুনঃ Pride and Prejudice Bangla Summary
Chapter 14, রচেস্টারের সঙ্গে কথোপকথন
কয়েকদিন জেন আয়ার-এর সঙ্গে দেখা হলো না মি. রচেস্টার-এর। এক রাতে নৈশভোজ শেষে তিনি ডাকলেন জেন ও অ্যাডেল-কে। অ্যাডেলকে দিলেন বহু প্রতীক্ষিত উপহার—প্যারিস থেকে আনা এক ড্রেস। আনন্দে অ্যাডেল খেলতে চলে গেল। এবার রচেস্টার শুরু করলেন জেনের সঙ্গে আলাপ। মনে হচ্ছিল, তিনি কিছুটা মদ্যপ। কথোপকথনে জেন যথারীতি সরাসরি উত্তর দিল। রচেস্টার হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন—সে কি মনে করে তিনি সুদর্শন? জেন খোলাখুলি বললো, না। অথচ মনে মনে সে প্রশংসা করছিল রচেস্টারের চোখের গভীরতা।
তারা কথা বলল পরস্পরের স্বভাব ও সমতায় আচরণের বিষয়ে। জেনের মনে হলো, কখনও কখনও রচেস্টার এমনভাবে বলে যেন তার মনের কথা পড়তে পারে। নিজেকে বর্ণনা করতে গিয়ে রচেস্টার বললেন—তিনি বহু অভিজ্ঞতায় গড়া, দুর্ভাগ্যে জর্জরিত এক মানুষ। মাংসপেশি যেন শক্ত হয়ে গেছে “ইন্ডিয়ান-রাবার”-এর মতো। তিনি অস্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন নিজের অতীত আর সংশোধনের পরিকল্পনা নিয়ে। জেন বিভ্রান্ত হলো এবং চুপ করে রইল। এই সময় ফিরে এলো অ্যাডেল। সে নতুন গোলাপি পোশাক পরে আনন্দে নাচতে লাগল। রচেস্টার বললেন, অ্যাডেল তাকে মনে করিয়ে দেয় তার ফরাসি মা—সেলিন ভারেন্স-কে। রচেস্টার প্রতিশ্রুতি দিলেন, একদিন জেনকে তিনি বলবেন কিভাবে আর কেন অ্যাডেল তার আশ্রিত হলো।
Chapter 15, রচেস্টারের ঘরে আগুন
এক বিকেলে মি. রচেস্টার জেনকে আলাদা করে ডেকে তার অতীত নিয়ে বলেন। বহু বছর আগে প্যারিসে তিনি প্রেমে পড়েছিলেন ফরাসি গায়িকা সেলিন ভারেন্স-এর। কিন্তু একদিন রচেস্টার তাকে আরেক পুরুষের সঙ্গে দেখে ফেলেন। সম্পর্ক ভেঙে যায়। রাগে তিনি সেই পুরুষকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আঘাত করেন। সেলিন দাবি করে, অ্যাডেল রচেস্টারের কন্যা। কিন্তু চেহারায় মিল না থাকায় রচেস্টার সন্দেহ করেন। তবুও যখন সেলিন অ্যাডেলকে ফেলে যায়, রচেস্টার দয়া করে তাকে নিয়ে আসেন ইংল্যান্ডে, যাতে ভালোভাবে মানুষ করা যায়।
সেই রাতে জেন ভাবতে থাকে রচেস্টারের গল্প। এখন তিনি আর গর্বিত অভিজাতের মতো আচরণ করছেন না। বরং তার সঙ্গে কথা বলতে জেনের ভালো লাগছে। কিন্তু ঘুমোতে গিয়ে জেন শুনতে পায় অদ্ভুত শব্দ। তার দরজায় শয়তানি হাসি। করিডরে পায়ের শব্দ, যা উঠে যায় তৃতীয় তলায়। ভয়ে জেন ছুটে যায় বাইরে। দেখে, রচেস্টারের ঘর থেকে ধোঁয়া উঠছে। তিনি গভীর ঘুমে। অথচ বিছানার পর্দায় আগুন জ্বলছে।
দ্রুত জেন পানি ঢেলে আগুন নেভায়। রচেস্টারের জীবন বাঁচে। জেগে উঠে তিনি ছুটে যান তৃতীয় তলায়। পরে ফিরে এসে জেনকে জিজ্ঞেস করেন—সে কি এর আগে ওই শয়তানি হাসি শুনেছে? জেন বলে, সে বহুবার গ্রেস পুল-এর হাসি শুনেছে। রচেস্টার তৎক্ষণাৎ বলেন—“ঠিক তাই, গ্রেস পুল—তুমি সঠিক ধরেছো।” কিন্তু তিনি জেনকে প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করেন, যেন এই ঘটনার কথা কাউকে না বলে। আবেগে আপ্লুত হয়ে রচেস্টার গভীর কৃতজ্ঞতা জানালেন জেনকে। তারপর তিনি রাত কাটান লাইব্রেরির সোফায়। অন্যদিকে জেন জেগে থাকে সারা রাত। তার মনে ভেসে ওঠে নতুন আবেগ, যা তাকে নাড়া দেয়।
Chapter 16, জেনের সন্দেহ গ্রেস পুলকে ঘিরে
সকালে বিস্মিত হলো জেন আয়ার। চাকররা বিশ্বাস করে—গত রাতের আগুন নাকি লেগেছিল যখন মি. রচেস্টারের জ্বলন্ত মোমবাতি পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য। তিনি নাকি নিজেই জেগে উঠে আগুন নেভান। আরও অবাক করে গ্রেস পুল-ও এই কাহিনি নিশ্চিত করল। অথচ তার আচরণে অপরাধীর মতো কোনো ভীতি নেই। জেন যখন হাসির প্রসঙ্গ তোলে, গ্রেস বলে—ওটা নিশ্চয়ই তার কল্পনা। তবে সাবধান হতে দরজা তালাবদ্ধ রাখতে বলে।
ঠিক এর কিছুদিন পর হতাশ হয় জেন। রচেস্টার হঠাৎ চলে গেলেন পাশের প্রাসাদে। সেখানে একদল অভিজাত অতিথির সঙ্গে মিলিত হবেন। তাদের মধ্যে আছেন সুন্দরী ব্ল্যাঞ্চ ইনগ্রাম। জেন নিজেকে ধমক দেয়। ভাবে, রচেস্টারের প্রতি তার আকর্ষণ ভুল ছিল। তার মতো মেয়ের কখনোই এমন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নিজেকে বাস্তবে ফেরাতে জেন আঁকে দুটি ছবি। একটিতে নিজের সাধারণ মুখ—সাদামাটা প্রতিচ্ছবি। আরেকটিতে আঁকে ব্ল্যাঞ্চ-এর সৌন্দর্যমণ্ডিত রূপ। এই ছবিগুলো তাকে মনে করিয়ে দেয় তাদের ভিন্ন সামাজিক অবস্থান, আর ভেঙে দেয় অবাস্তব আশা।
Chapter 17, থর্নফিল্ডে ব্লাঞ্চ ইনগ্রামের আগমন
এক সপ্তাহ অনুপস্থিত থাকার পর জেন আয়ার হতাশ হয়ে শোনে মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স-এর মুখে—মি. রচেস্টার নাকি এক বছরের জন্য ইউরোপে চলে যেতে পারেন। কিন্তু আবার এক সপ্তাহ পর নতুন খবর আসে—রচেস্টার তিন দিনের মধ্যেই ফিরবেন, সঙ্গে আনবেন একদল অতিথি। এদিকে জেন নজর রাখছে গ্রেস পুল-এর দিকে। সে বেশিরভাগ সময় কাটায় একা উপরের তলায়। অথচ অন্য চাকরদের সঙ্গে আচরণে একেবারে স্বাভাবিক। আরও বিস্মিত হয় জেন যখন শোনে, গ্রেস নাকি অন্য চাকরদের চেয়ে বেশি বেতন পায়। তখনই জেনের মনে হয়, এখানে নিশ্চয়ই কোনো অদ্ভুত রহস্য লুকানো আছে।
অবশেষে এসে পৌঁছায় রচেস্টারের পার্টি। সবাই প্রবেশ করে ড্রইংরুমে। ফরাসি পোশাক পরে উজ্জ্বল অ্যাডেল তারকাখচিত চোখে ঘুরে বেড়ায় অতিথিদের মাঝে। আর সাদামাটা কুয়েকার-ধাঁচের পোশাকে জেন নিঃশব্দে সরে যায় এক কোণে। সেখান থেকে তাকিয়ে দেখে ব্ল্যাঞ্চ ইনগ্রাম-কে—যে আসলেই তার কল্পনার মতোই সুন্দরী। (“Quakerish frock” বলতে বোঝানো হচ্ছে: একেবারে সাধারণ, অলঙ্কারহীন, সাদামাটা পোশাক।) অর্থলোভী ব্ল্যাঞ্চ সরাসরি মনোযোগ দেয় রচেস্টারের দিকে। আড়াল না রেখে জেনকে খোঁচা মেরে উচ্চস্বরে বলে সে বসে—তার জীবনে কত ভয়ঙ্কর সব গভর্নেস পেয়েছিল। তারপর সে রচেস্টারকে বাধ্য করে নিজের সঙ্গে গান গাইতে।
Chapter 18, পার্টি ও রহস্যময় ভবিষ্যৎবক্তা
কয়েকদিন ধরে থর্নফিল্ড হলে অতিথিরা অবস্থান করল। প্রতি রাতে জেন আয়ারকে সহ্য করতে হলো অর্থলোভী ব্ল্যাঞ্চ ইনগ্রাম-এর অবিরাম ফ্লার্টিং মি. রচেস্টার-এর সঙ্গে। এক সন্ধ্যায় আয়োজন করা হলো চরেড খেলা। সেখানেও জেনকে বাদ দেওয়া হলো। তবে জেন অনুভব করল—ব্ল্যাঞ্চ যতই চেষ্টা করুক, রচেস্টারকে পুরোপুরি মুগ্ধ করতে পারছে না। তবুও জেন মনে মনে ভাবে—হয়তো একদিন রচেস্টার ব্ল্যাঞ্চকেই বিয়ে করবেন। হয়তো সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণে, যা তার কাছে স্পষ্ট নয়।
এরই মধ্যে একদিন রচেস্টার বাইরে কাজে চলে গেলেন। হঠাৎ বাড়িতে এলেন এক অদ্ভুত ভদ্রলোক—মি. মেসন। তার শূন্য, ফাঁকা চাহনি জেনকে অস্বস্তিতে ফেলল। জানা গেল, তিনি আর রচেস্টার দুজনেই ব্যবসার কাজে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। কয়েক রাত পর, যখন রচেস্টার তখনও অনুপস্থিত, বাড়িতে আসে এক বৃদ্ধ জিপসি নারী। তিনি অতিথিদের ভাগ্য গণনা করবেন বলে জানান। ব্ল্যাঞ্চ-ই প্রথম এগিয়ে যায়। কিন্তু লাইব্রেরি থেকে ফেরার পর তার মুখভঙ্গিতে দেখা যায় হতাশার ছাপ। অন্য মেয়েরা অবাক হয়ে ফিসফিস করে সেই জিপসি নারীর অদ্ভুত জ্ঞানের কথা। ঠিক তখনই বৃদ্ধা জানান—এবার তিনি একান্তে দেখতে চান জেন আয়ার-কে।
Chapter 19, ভবিষ্যৎবক্তা আসলে রচেস্টার
একান্তে বসলো জেন আয়ার ও বৃদ্ধা জিপসি নারী। তার মুখ ঢাকা বড় টুপির আড়ালে। তিনি জেনের মনের একাকীত্ব ও চেপে রাখা অনুভূতির কথা বললেন। প্রথমে সন্দেহ করলেও জেন অবাক হলো তার সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টিতে। জিপসি জানালেন—জেন সুখের খুব কাছাকাছি। তিনি আরও বললেন, ব্ল্যাঞ্চ ইনগ্রাম হতাশ হয়েছিল কারণ জিপসি তাকে জানিয়েছিল—রচেস্টার তেমন ধনী নন যেমন মনে হয়। এরপর জিপসি জিজ্ঞেস করলেন, জেনের কোনো প্রেম আছে কি না। জেন সরলভাবে বলল—না। সে স্বীকার করল, সে একা, তবে দুঃখী নয়। একদিন নিজের স্কুল গড়ার চিন্তাই তাকে আনন্দ দেয়।
এমন সময় জিপসির কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে উঠল। হাতের ভঙ্গিতেও কিছু চিনে ফেলল জেন। হঠাৎ বুঝে গেল—এ বৃদ্ধা আসলে ছদ্মবেশে থাকা মি. রচেস্টার! এক মুহূর্তের জন্য সে ভেবেছিল হয়তো এ গ্রেস পুল। প্রতারণায় রাগে জেন ক্ষুব্ধ হলেও রচেস্টারকে জানায় মি. মেসন-এর আগমনের কথা। তখনই রচেস্টার হঠাৎ মানসিক ধাক্কা খান। (সে আসলে মি. মেসন-এর আগমনে অস্বস্তি, ভীতি আর গোপন রহস্যের চাপে কাঁপতে থাকে।) জেন তাকে ধরে রাখে। রচেস্টার জিজ্ঞেস করেন—কোনো কেলেঙ্কারি ঘটলে কি জেন তাকে ছেড়ে যাবে? জেন দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতি দেয়, সে তার পাশে থাকবে। তারপর জেন গিয়ে মি. মেসনকে রচেস্টারের কাছে নিয়ে আসে।
Chapter 20, অচেনা অতিথি রিচার্ড ম্যাসন
মধ্যরাতে হঠাৎ থর্নফিল্ড হল কেঁপে উঠল এক ভয়াবহ চিৎকারে। সব অতিথি ছুটে এল করিডরে। কিন্তু মি. রচেস্টার সবাইকে শান্ত করলেন। বললেন—একজন চাকর দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করেছে। অতিথিরা ফিরে গেল কক্ষে। কিছুক্ষণ পর রচেস্টার গোপনে কড়া নাড়লেন জেন আয়ার-এর দরজায়। তাকে সাহায্যের জন্য ডাকলেন। দুজনে গেলেন তৃতীয় তলায়, গ্রেস পুল-এর ঘরে। সেখানে শুয়ে আছেন মি. মেসন—হাতে ছুরির আঘাত আর কামড়ের গভীর ক্ষত। জেন আর রচেস্টার মিলে তার ক্ষত বেঁধে দিলেন।
রচেস্টার তখন বেরিয়ে গেলেন চিকিৎসক আনতে। যাবার আগে কড়া নির্দেশ দিলেন—জেন ও মেসন যেন কোনো কথা না বলে। অন্ধকার ঘরে জেন একা বসে রইল আহত মেসনের পাশে। করিডরের তালাবদ্ধ ঘর থেকে ভেসে এলো পশুর মতো গর্জন আর মানুষের গোঙানি। ভোরের আগে রচেস্টার ফিরে এলেন সার্জন নিয়ে। তারা মেসনের ক্ষত সেলাই করল এবং গোপনে তাকে পাঠিয়ে দিলেন। যাতে কোনো অতিথি কিছুই টের না পায়।
এরপর রচেস্টার জেনকে নিয়ে বেরোলেন বাগানে। সেখানে তিনি বলতে লাগলেন এক গল্প। গল্পের যুবক আসলে তার নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি। যৌবনে রচেস্টার এক ভুল সম্পর্ক বা কাজ-এ জড়িয়ে পড়েছিলেন (যা উপন্যাসে পরে প্রকাশ পাবে—তার গোপন বিবাহ, অর্থাৎ বার্থা মেসনের সঙ্গে বিয়ে)। সেই ভুল থেকে পালাতে গিয়ে তিনি বিদেশে ঘুরেছেন—ফ্রান্স, ইতালি, জ্যামাইকা প্রভৃতি জায়গায়। সেখানেই তিনি নানা সম্পর্ক, ভোগবিলাস আর অনৈতিক জীবনে সময় কাটান। অর্থাৎ তিনি অতীতের দুঃখ ঢাকতে গিয়ে ভেসে যান বিলাসিতা ও পাপময় জীবনে।
রচেস্টার প্রশ্ন করলেন—যদি সেই যুবক এখন নতুন জীবন চায়, নৈতিক পথে স্ত্রী নিয়ে মুক্তি খুঁজতে চায়, কিন্তু সমাজের নিয়মে আটকা পড়ে, তবে কী করা উচিত? জেন শান্তভাবে উত্তর দিল—মানুষকে নয়, মুক্তির জন্য তাকাতে হবে ঈশ্বরের দিকে। তখন হঠাৎ রচেস্টার বললেন—তিনি ব্ল্যাঞ্চকেই বিয়ে করবেন, নিজের পুনর্জাগরণের জন্য। তারপর দ্রুত আলোচনার বিষয় পাল্টে দিলেন।
Chapter 21, গেটসহেডে ফেরা: মিসেস রিডের মৃত্যু
এক বিকেলে থর্নফিল্ডে আসে এক বার্তাবাহক। খবর আনে—জন রিড জুয়ায় ঋণে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যা করেছে। এদিকে মিসেস রিড মরণাপন্ন, আর শেষ ইচ্ছায় দেখতে চাইছে জেন আয়ার-কে। তাই জেন যাত্রা করে গেটসহেডের পথে। সেখানে গিয়ে জেনের দেখা হলো স্নেহময়ী বেসি-র সঙ্গে। দুজনের পুনর্মিলন হলো আনন্দঘন। কিন্তু রিড বোনেরা ততদিনে ভিন্ন মানুষ হয়ে গেছে। এলিজা কঠোর, সংগঠিত, ধর্মভীরু। আর জর্জিয়ানা রয়ে গেছে রোমান্টিক, বাহ্যিক সাজে মগ্ন, প্রেমের গল্পে উচ্ছ্বসিত।
মৃত্যুশয্যাতেও মিসেস রিড-এর মনে অনুতাপ নেই। তিনি জেনকে পূর্বের নিষ্ঠুরতার জন্য ক্ষমা চান না। তবে দশম দিনে হঠাৎ ডাকলেন জেনকে। গোপন করলেন এক ভয়াবহ সত্য। তিনি স্বীকার করলেন—তিন বছর আগে জেনের কাকা জন আয়ার, ধনী ওয়াইন ব্যবসায়ী, তাকে নিজের তত্ত্বাবধানে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিসেস রিড প্রতারণা করে লিখেছিলেন—জেন নাকি লোউডে জ্বরে মারা গেছে। এর মাধ্যমে তিনি জেনের উন্নতির সব পথ বন্ধ করে দেন। এই কথা শুনে জেন আঘাত পেলেও চেষ্টা করল সম্পর্ক মেরামত করতে। কিন্তু মিসেস রিড তাকে প্রত্যাখ্যান করলেন। সেদিন রাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন।
Chapter 22, বাগানে রচেস্টারের সঙ্গে পুনর্মিলন
মিসেস রিড-এর মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির ব্যবস্থা করতে এক মাস গেটসহেডে থাকল জেন আয়ার। এ সময় জর্জিয়ানা রিড লন্ডনে চলে গেল এবং পরে এক ধনী ভদ্রলোককে বিয়ে করল। অপরদিকে এলিজা রিড গেল ফ্রান্সে, এক কনভেন্টে যোগ দিল এবং পরবর্তীতে সেখানকার মাদার সুপিরিয়র হলো। গেটসহেডে থাকার সময় জেন পেল মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স-এর একটি চিঠি। তাতে লেখা ছিল—মি. রচেস্টার লন্ডনে গেছেন এক নতুন গাড়ি কিনতে। জেন মনে করল, এটি নিশ্চয়ই ব্ল্যাঞ্চ ইনগ্রাম-কে বিয়ে করার প্রস্তুতি। এতে ভয়ে ভরে গেল তার মন। ভাবল, থর্নফিল্ডে তার দিন শেষ হতে চলেছে।
ফিরতি পথে হঠাৎ দেখা হলো জেনের সঙ্গে রচেস্টারের। তিনি নতুন গাড়ি চালাচ্ছিলেন। উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে রচেস্টার জেনকে বললেন—গাড়িটি দেখে বলো তো, “এটি কি মিসেস রচেস্টারের জন্য একেবারে মানানসই নয়?” রচেস্টারের উপস্থিতিতে আনন্দে ভরে উঠল জেন। সে উচ্ছ্বাসে বলে উঠল, ফিরে আসাতে কতখানি খুশি সে। এরপর আবেগে স্বীকার করল—“আপনি যেখানে থাকেন, সেখানেই আমার ঘর—আমার একমাত্র ঘর।”
Chapter 23, প্রস্তাবনা
থর্নফিল্ডে ফেরার দুই সপ্তাহ পর বাগানে দেখা হলো জেন আয়ার ও মি. রচেস্টার-এর। রচেস্টার জানালেন—তিনি ব্ল্যাঞ্চ ইনগ্রাম-কে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেনকে বললেন, জেনের জন্য আয়ারল্যান্ডে এক গভর্নেসের কাজ ঠিক করেছেন। শুনে বিচলিত হলো জেন। সে বলল, আয়ারল্যান্ড অনেক দূরে। সে বোঝাল, থর্নফিল্ডই তার প্রিয় জায়গা। তখন রচেস্টার অনুরোধ করলেন, জেন যেন থেকে যায়। (রচেস্টারের আসল উদ্দেশ্য জেনকে ঈর্ষান্বিত করা)
কিন্তু জেন দৃঢ়ভাবে জানাল, সে স্বাধীন, সমান। সে রচেস্টারকে ভর্ৎসনা করল—ভালোবাসাহীন বিয়ের জন্য। হঠাৎ রচেস্টার সব স্বীকার করলেন। জানালেন—তিনি কখনোই ব্ল্যাঞ্চকে বিয়ের ইচ্ছা করেননি। কেবল জেনকে ঈর্ষান্বিত করার চেষ্টা করেছিলেন। অবশেষে রচেস্টার আবেগে ভেসে জেনকে প্রস্তাব দিলেন—বিয়ে করতে। প্রথমে জেন মনে করল, হয়তো তিনি ঠাট্টা করছেন। কিন্তু রচেস্টারের দৃঢ়তায় সে নিশ্চিত হলো। আবেগে ভেসে জেন সম্মতি দিল। ঠিক তখনই আকাশের রং পাল্টে গেল। শুরু হলো প্রবল বর্ষণ। দুজন ছুটে গেল ভেতরে। রচেস্টার আলতো চুম্বনে সিল করলেন প্রতিশ্রুতি। সেই রাতে বজ্রবিদ্যুৎ আঘাত করল থর্নফিল্ডের এক প্রাচীন চেস্টনাট গাছে—যে গাছের নিচে রচেস্টার জেনকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। গাছটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল আসন্ন ঝড়ের অশুভ প্রতীক হয়ে।
Chapter 24, থর্নফিল্ডে বাগদানের দিনগুলো
মি. রচেস্টার প্রতিশ্রুতি দিলেন—বিয়েটা হবে চার সপ্তাহের মধ্যেই। বাগদানের ঘোষণা হলে মিসেস ফেয়ারফ্যাক্স জেনকে অভিনন্দন জানালেন, তবে খুব ঠান্ডা ভঙ্গিতে। তিনি সাবধান করলেন—পুরুষদের ওপর ভরসা করা কঠিন, আর অসম সামাজিক মর্যাদার বিয়ে বিপজ্জনক হতে পারে। জেন বিরক্ত হলো ফেয়ারফ্যাক্সের এই সন্দেহ দেখে। তবুও তার নিজের ভেতরেও একটুখানি সংশয় রয়ে গেল। প্রথমে সে আনন্দে ভেসে গেল—মনে হলো যেন পরীর গল্পের নায়িকা সে।
কিন্তু শিগগিরই রচেস্টার তাকে দামি উপহার ও অতিরিক্ত প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন। এতে জেন অপমানিত বোধ করল। তার মনে হলো, তাকে যেন বস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। সে দৃঢ়ভাবে জানাল—সে চায় স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে। গভর্নেসের বেতনে চলবে, আর আগের মতো সাদাসিধে পোশাকই পরবে। গোপনে জেন সিদ্ধান্ত নিল—সে উত্তর দেবে তার চাচা জন আয়ার-এর সেই চিঠির। যেটি মিসেস রিড লুকিয়ে রেখেছিল। চিঠিতে লেখা ছিল, জন আয়ার হয়তো জেনকে তার উত্তরাধিকারী বানাবেন। এতে জেনের আশা হলো—সে অন্তত শ্রেণিগত দিক থেকে রচেস্টারের সমান হতে পারবে। বিয়ের প্রস্তুতি চলতে থাকল। কিন্তু জেন বারবার রচেস্টারের রোমান্টিক টান প্রতিরোধ করল। ইচ্ছে করে তর্কে জড়াল, তাকে রাগাল। তবুও নিজের অন্তরে রচেস্টারকে দেবতার মতো পূজা করল।
আরো পড়ুনঃ Tess of the d’Urbervilles Bangla Summary
Chapter 25, ভয়ের স্বপ্ন ও বিয়ের আগের রাত
বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। ইউরোপে মধুচন্দ্রিমার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলো। এ সময় মি. রচেস্টার সাময়িক কাজে বাইরে গেলেন। একা জেন হাঁটতে গিয়ে দেখল বজ্রপাতে ভেঙে যাওয়া পুরনো চেস্টনাট গাছ। পরের দিন রচেস্টার ফিরে এলে, বিয়ের আগের রাতে, জেন আয়ার তাকে জানাল কিছু অদ্ভুত ঘটনার কথা। প্রথমে সে স্বপ্নে দেখেছিল—এক দীর্ঘ, শূন্য রাস্তায় সে একা হাঁটছে, কোলে এক কাঁদতে থাকা শিশু। দ্বিতীয় স্বপ্নে সে দাঁড়িয়ে আছে ভগ্নপ্রায় থর্নফিল্ডে। কোলে একই শিশু। হঠাৎ হোঁচট খেয়ে শিশুটিকে ফেলে দেয় মাটিতে। স্বপ্নের ধাক্কায় জেন জেগে ওঠে।
জেগে উঠে সে দেখে—তার ঘরে এক অচেনা নারী। উন্মাদ চুল, বিকৃত, ভীতিকর মুখ। সেই নারী জেনের আলমারি ঘাঁটছে। পরে মাথায় চাপায় জেনের বিয়ের ঘোমটা। হঠাৎ ছিঁড়ে ফেলে সেটি, মাটিতে পিষে দেয়। রচেস্টার শুনে ঘটনাকে উড়িয়ে দিলেন। বললেন—সবই নাকি জেনের স্বপ্ন। কিংবা হলেও সেটি হয়তো গ্রেস পুল-এর কাজ। তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন—সবকিছু ব্যাখ্যা করবেন তাদের বিয়ের পর, তবে “এক বছর এক দিন” পেরিয়ে। সেদিন রাতে ভয়ে জেন ছোট্ট অ্যাডেল-কে আঁকড়ে ধরে শুয়ে রইল নার্সারিতে, দরজা তালাবদ্ধ করে। সকালে অ্যাডেলকে ছেড়ে যাওয়ার সময় তার চোখ ভিজে উঠল কান্নায়।
Chapter 26, ভাঙা বিয়ে (বার্থার পরিচয় উন্মোচন)
সকালে বিয়ের দিন। তাড়াহুড়ো করে মি. রচেস্টার জেনকে নিয়ে গেলেন চার্চে। চার্চইয়ার্ডে জেন খেয়াল করল দুজন অচেনা লোককে। তারা বিয়ের অনুষ্ঠানেও হাজির হলো। যাজক যখন জিজ্ঞেস করলেন—কেউ কি আপত্তি জানাতে চায়, তখন এক অচেনা ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে বললেন—এই বিয়েতে “বাধা” আছে। রচেস্টার চাইলেন অনুষ্ঠান চলুক, কিন্তু যাজক অস্বীকার করলেন। লোকটি নিজের পরিচয় দিলেন—তিনি মি. ব্রিগস, লন্ডনের এক আইনজীবী। তিনি ঘোষণা করলেন—রচেস্টার ইতিমধ্যেই বিবাহিত। পনেরো বছর আগে জামাইকার এক ক্রিওল নারী, বার্থা মেসন-কে বিয়ে করেছিলেন তিনি।
অন্য অপরিচিত অতিথি এগিয়ে এলেন। তিনি আসলে বার্থার ভাই মি. মেসন। তিনি ঘটনাটি নিশ্চিত করলেন। ক্ষুব্ধ রচেস্টার স্বীকার করলেন—হ্যাঁ, এ সত্য। তবে জানালেন—বার্থা উন্মাদ, তাকে থর্নফিল্ডের তৃতীয় তলায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। সবাইকে নিয়ে রচেস্টার ফিরলেন থর্নফিল্ডে। সেখানে গোপন দরজা খুলতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন গ্রেস পুল। ছায়ার ভেতরে এদিক-সেদিক ঘুরছিল এক জীর্ণ, পাগলিনী। এ-ই বার্থা মেসন। জেনের চোখে সে যেন আধা-মানব, আধা-পশু।
বার্থা হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল রচেস্টারের উপর। তাকে কুস্তি করে বশে আনলেন রচেস্টার। তিনি ব্যাখ্যা করলেন—বিয়ের আগে তার পরিবার গোপন করেছিল বার্থার উন্মাদনা। এরপর মি. মেসন জানালেন সত্যিটা জেনকে। তিনি বিয়ের খবর জেনের চাচা জন আয়ার-এর কাছ থেকে জেনেছিলেন। চিঠি পেয়ে জন আয়ার মেসনকে পাঠান বিয়ে ঠেকাতে। কিন্তু নিজে আসতে পারেননি, কারণ তিনি মৃত্যুপথযাত্রী, ভুগছেন ক্ষয়রোগে (টিবি)।
Chapter 27, রচেস্টারের স্বীকারোক্তি ও জেনের প্রস্থান
সবকিছু জানার পর জেন আয়ার বুঝল—তার থর্নফিল্ড ছেড়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু ঘর থেকে বের হতেই সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মি. রচেস্টার। তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। জেন চুপ করে রইল, যদিও মনে মনে সাথে সাথে তাকে ক্ষমা করে দিল। রচেস্টার অনুনয় করলেন—সে যেন তার সাথে ফ্রান্সে চলে যায়। কিন্তু জেন দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করল। কারণ এতে তাকে রচেস্টারের উপপত্নী হতে হতো। অথচ সে চায় মর্যাদাপূর্ণ ভালোবাসা। তখন রচেস্টার স্বীকার করলেন তার অতীত। বললেন—তার বাবা সমস্ত সম্পদ দিয়ে গিয়েছিলেন বড় ভাইকে। ছোট ছেলের জন্য ব্যবস্থা করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব ও এক ধনী কন্যার সাথে বিয়ে। সেই মেয়েই ছিল বার্থা মেসন।
রচেস্টার স্বল্প পরিচয়ে বার্থাকে বিয়ে করেন। তার সৌন্দর্য আর ভিন্ন স্বভাব তাকে মোহিত করেছিল। কিন্তু বিয়ের পরই প্রকাশ পেল সত্য—বার্থার মা উন্মাদ ছিলেন। আর বার্থাও শিগগিরই হলো হিংস্র, বিকৃত স্বভাবের এবং পাগলামিতে নিমজ্জিত। এরপর রচেস্টারের বাবা ও ভাই মারা গেলেন। আইনত স্ত্রীকে ত্যাগ করা সম্ভব হলো না। তাই রচেস্টার তাকে লুকিয়ে রাখলেন থর্নফিল্ডের তৃতীয় তলায়। দায়িত্ব দিলেন গ্রেস পুল-কে পাহারা দেওয়ার। তিনি নিজে বিদেশে চলে গেলেন। স্ত্রী না পেয়ে একে একে জড়িয়ে পড়লেন নানা সম্পর্ক ও ভোগবিলাসে। ছিলেন সেলিন ভারেন্স-এর মতো উপপত্নীর সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত তিনি ঘৃণা করতে লাগলেন এই জীবনকে—যেন মানুষ কেনাবেচা হচ্ছে।
ইংল্যান্ডে ফিরে তিনি নিয়ে এলেন অ্যাডেল-কে। আর তখনই তার দেখা হয় জেন আয়ার-এর সঙ্গে। প্রথম মুহূর্ত থেকেই ভালোবেসে ফেলেছিলেন তাকে। কিছুক্ষণ জেনের মনে হলো—হয়তো থেকে যাওয়া উচিত। এতদিনের নিঃসঙ্গ জীবনে সে প্রাপ্য একজন অনুগত মানুষ। আবার ভয় পেল—এমন সুযোগ হয়তো আর পাবে না। কিন্তু একই সাথে জানল—সঠিক পথ কেবল আত্মসম্মান বজায় রাখা। রাতের বেলায় স্বপ্নে সে দেখল মায়ের মুখ। মা বলছেন—প্রলোভন থেকে পালাও। জেন সাহস সঞ্চয় করল। নিজের অল্প কিছু জিনিসপত্র নিয়ে চুপিসারে ছেড়ে গেল থর্নফিল্ড। ভোরের পথে ভাড়া করল এক গাড়ি—অজানা গন্তব্যে যাত্রা শুরু করল একা।
Chapter 28, জেনের পালানো ও রিভার্স পরিবারের সাহায্য
থর্নফিল্ড ছেড়ে আসার পর দ্রুতই টাকার অভাবে পড়ে জেন। গাড়ি তাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়, আর জেন খেয়াল করে—তার জিনিসপত্র গাড়িতেই থেকে গেছে। একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় সে আকাশের তারা দেখে ঈশ্বরের কথা চিন্তা করতে করতে রাত কাটায়। পরদিন জেন কাছের গ্রামে কাজ খুঁজতে যায়। কিন্তু কোথাও কাজ মেলে না। খাবারের জন্য সে নিজের গ্লাভস আর রুমাল বিনিময় করতে চাইলেও প্রত্যাখ্যাত হয়। ক্ষুধা আর লজ্জায় জ্বলে ওঠে তার মন। শেষে এক খামারে গিয়ে শুকরের জন্য রাখা পায়েস ভিক্ষা করে খেতে চায়।
অসহায় ও দুর্বল জেন হেঁটে চলে যায় অজানার দিকে। মনে হলো—এবার হয়তো মৃত্যুই অপেক্ষা করছে। ঠিক তখনই দূরে এক মোমবাতির আলো দেখতে পায় সে। আলো অনুসরণ করে পৌঁছে যায় একটি বাড়িতে—মুর হাউস। ভেতরে মেরি ও ডায়ানা রিভারস জার্মান পড়াশোনা করছিল। দরজায় কড়া নাড়তেই দাসী হান্না তাকে সন্দেহজনক ভিখারিনী ভেবে ফিরিয়ে দেয়। জেন ক্লান্ত হয়ে বাইরে পড়ে যায়, মৃত্যুর প্রতীক্ষায়। ঠিক সেই সময় ঘরে ফেরে দুই বোনের ভাই—সেন্ট জন রিভারস। তিনি জেনকে ঘরে তুলে আনেন। বোনেরা তাকে খাওয়ায়, শুকনো বিছানা দেয়। জেন নিজের পরিচয় গোপন রাখে। নতুন নাম নেয়—জেন এলিয়ট।
Chapter 29, মুর হাউসে জীবন: ডায়ানা ও মেরির সঙ্গে
মুর হাউসে আশ্রয় পাওয়ার পর জেন তিন দিন আধা-অচেতন অবস্থায় কাটায়। চতুর্থ দিনে জেগে দেখে—তার পোশাক পরিষ্কার, গরম খাবার প্রস্তুত। জেন অভিযোগ তোলে—সেদিন রাতে হান্না তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। হান্না ক্ষমা চায়। তারপর সে রিভারস পরিবার সম্পর্কে জানায়। হান্না বলে—তাদের বাবা ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিন সপ্তাহ আগে মারা গেছেন। বোনেরা—মেরি ও ডায়ানা—এখনও স্কুলে পড়ে, পরে গভর্নেসের কাজ খুঁজবে। ভাই সেন্ট জন একজন গরিব পুরোহিত। পরে জেন নিজের জীবনের কিছু সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানায়। তবে নাম প্রকাশ করে না, কিংবা পুরোনো নিয়োগকর্তার কথা বলে না। সে জানায়—তার ইংল্যান্ডে কোনো আত্মীয় নেই। জেন কাজ খুঁজে দেওয়ার অনুরোধ করে। সেন্ট জন দৃঢ় হলেও দয়ালু। তিনি সাহায্যের আশ্বাস দেন। উষ্ণ মনের মেরি ও ডায়ানা জেনকে আশ্বস্ত করে—সে চাইলে তাদের সাথেই থাকতে পারে।
Chapter 30, সেন্ট জন রিভার্স
খুব তাড়াতাড়ি জেন আয়ার-এর সঙ্গে মেরি ও ডায়ানা রিভারস-এর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তারা বই পড়ে, আলাপ করে। জেন তাদের আঁকা শেখায়। প্রকৃতির মাঝে তারা আনন্দ খুঁজে পায়। এক মাস এভাবে কেটে যায়। তারপর মেরি ও ডায়ানা ধনী পরিবারে গভর্নেসের চাকরি নিতে চলে যায়। যাওয়ার আগে তারা জানায়—সেন্ট জন হয়তো মিশনারি হয়ে বিদেশে চলে যাবে। সেন্ট জন তার বোনদের মতো প্রাণবন্ত নয়। সে চিন্তান্বিত ও দূরত্ব বজায় রাখে। জেন তার গির্জায় যায়। সেখানে সেন্ট জনের কঠোর ধর্মোপদেশ শুনে সে দুঃখ পায়।
আলোচনায় জেন ও সেন্ট জন বুঝতে পারে—দুজনেই অস্থির, তবে ভিন্নভাবে। সেন্ট জন জেনকে প্রস্তাব দেয়—সে যেন মর্টনের গরিব শিশুদের জন্য একটি ছোট স্কুল চালায়। আয় ও থাকার ব্যবস্থা অল্প হলেও জেন খুশি মনে গ্রহণ করে। এর কিছুদিন পর একটি চিঠি আসে। তাতে জানা যায়—তাদের ধনী চাচা জন মারা গেছেন। কিন্তু তিনি সেন্ট জন, মেরি ও ডায়ানাকে কিছুই দেননি। সব সম্পদ দিয়ে গেছেন এক অজানা আত্মীয়কে। তারা জানায়—এই চাচাই তাদের বাবাকে ব্যবসায় ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছিল।
Chapter 31, মোর্টনে স্কুলশিক্ষিকা জেন
জেন আয়ার স্কুলে কাজ শুরু করল। তার ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল, যাদের শিক্ষার মান খুবই কম। জেন মনে করল—মানবিক সম্ভাবনা শ্রেণি দিয়ে সীমাবদ্ধ নয়। তবুও ছোট শহরের শিক্ষক হয়ে সে কিছুটা অপমানিত বোধ করল। জেন ভাবল—যদিও জীবন স্থবির মনে হচ্ছে, তবুও সে কৃতজ্ঞ। সে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলো—কারণ সে রচেস্টারের উপপত্নী হয়নি। আলোচনায় সেন্ট জন বলল—সে-ও একসময় তার পেশা নিয়ে সন্দেহে ছিল। কিন্তু এখন সে জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছে। সে হবে একজন মিশনারি, যাবে ভারতে। কঠিন হলেও এ পথ মহৎ বলে সে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করল। স্কুলের একজন দাতা ছিলেন ধনী ও সৌন্দর্যে অতুলনীয়া রোজামন্ড অলিভার। জেন লক্ষ্য করল—রোজামন্ড আর সেন্ট জন-এর মধ্যে গভীর প্রেম আছে।
Chapter 32, রোজামন্ড অলিভার ও সেন্ট জনের দ্বন্দ্ব
দিন যেতে লাগল। জেন আয়ার ধীরে ধীরে পড়ানোয় আনন্দ খুঁজে পেল। ছাত্র-ছাত্রীরা উন্নতি করতে শুরু করল। গ্রামবাসীর কাছে সে হয়ে উঠল সবার প্রিয় ও সম্মানিত। নতুন জীবনে সে শান্ত থাকলেও, বারবার রচেস্টার-এর স্বপ্ন তাকে অস্থির করত। ধনী সুন্দরী রোজামন্ড অলিভার প্রায়ই স্কুলে আসত। কাকতালীয়ভাবে তখনই থাকত সেন্ট জন। জেন বুঝল—রোজামন্ড এলে সেন্ট জনের মনে আলোড়ন জাগে।
বাড়িতে ফিরে জেন রোজামন্ডের ছবি আঁকল। ছবিটি সেন্ট জনকে দিল। সেন্ট জন মুগ্ধ হয়ে ১৫ মিনিট ছবির দিকে তাকিয়ে রইল। সুযোগ দেখে জেন সাহস করে বলল—সে যেন রোজামন্ডকে বিয়ে করে। সেন্ট জন স্বীকার করল—সে রোজামন্ডকে ভালোবাসে। কিন্তু বলল—রোজামন্ড মিশনারির কঠিন জীবন মানতে পারবে না। সে জানাল—পার্থিব সুখের জন্য সে স্বর্গীয় লক্ষ্য ছাড়বে না। হঠাৎ সেন্ট জন জেনের ছবির কাগজের কোণে কিছু দেখল। অস্থির হয়ে সে কাগজের এক অংশ ছিঁড়ে নিল। তারপর হঠাৎ ঘর ছেড়ে চলে গেল। বিস্মিত জেন ঘটনাটিকে গুরুত্ব না দিয়ে ভুলে গেল।
Chapter 33, জেনের উত্তরাধিকার ও নতুন পরিবার
এক রাতে তুষার ভেদ করে সেন্ট জন এলেন জেন আয়ার-এর কাছে। তিনি এক গল্প শোনালেন। বিস্ময়ে জেন বুঝল—এ আসলে তার নিজের জীবনের ইতিহাস। গল্পের শেষে জেন জানল এক অজানা সত্য। জন আয়ার, তার চাচা, মারা গেছেন। তিনি জেনের জন্য রেখে গেছেন ২০ হাজার পাউন্ড সম্পদ। থর্নফিল্ড থেকে জেনের হারিয়ে যাওয়ার পর তার খোঁজে সর্বত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। একটি চিঠি এসে পৌঁছায় সেন্ট জনের কাছে।
সেন্ট জন তখন জানালেন তার পূর্ণ নাম—সেন্ট জন আয়ার রিভারস। তার মা ছিলেন জেনের বাবার বোন। ফলে মেরি, ডায়ানা আর সেন্ট জন—তিনজনই জেনের আপন চাচাতো ভাইবোন। সেন্ট জন ব্যাখ্যা করলেন—জেনের ছবির কাগজের কোণে যে লেখা পেয়েছিলেন, তাতে ছিল নাম “Jane Eyre”। সেখান থেকেই তিনি সবকিছু বুঝতে পেরেছিলেন। হঠাৎ করে আপন পরিবার পেয়ে জেন উচ্ছ্বসিত হলো। সে স্থির করল—বিশ হাজার পাউন্ড সমান ভাগে ভাগ করবে সবার মধ্যে। জেন চাইলো—এই সম্পদে মেরি, ডায়ানা ও সেন্ট জন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হোক। আর তারা যেন কাছাকাছি থেকে একসাথে জীবনযাপন করতে পারে।
Chapter 34, সেন্ট জনের প্রস্তাব
শীতের ছুটিতে জেন আয়ার তার স্কুল বন্ধ করল। আনন্দের সঙ্গে কাটাল বড়দিন মেরি ও ডায়ানা-কে নিয়ে, যারা তখন চাকরি থেকে ফিরেছে। এই সময় সেন্ট জন হয়ে উঠলেন আরো শীতল ও নিরাসক্ত। যখন রোজামন্ড অলিভার-এর কথা জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি জানালেন—রোজামন্ড এখন এক ধনী অভিজাতকে বিয়ে করেছেন। একদিন সেন্ট জন দেখলেন, জেন জার্মান পড়ছে। তিনি প্রস্তাব দিলেন—জেন যেন তার বদলে শিখে নেয় হিন্দোস্তানি, যে ভাষা তিনি ভারতে মিশনারির কাজে শিখছেন। জেন রাজি হলো। তবে মনে হলো—সেন্ট জন ধীরে ধীরে তার ওপর অদ্ভুত প্রভাব বিস্তার করছেন, যা তাকে ঠাণ্ডা করে দেয়।
গ্রীষ্মে একদিন সেন্ট জন জেনকে নিয়ে পাহাড়ে হাঁটতে গেলেন। সেখানেই বললেন—জেনের অসাধারণ গুণ রয়েছে। এরপর হঠাৎই প্রস্তাব দিলেন—জেন যেন তাকে বিয়ে করে ভারতে মিশনারি কাজে সঙ্গ দেয়। জেন অনুভব করল—তার “হৃদয় নীরব”। সে জানে—সেন্ট জনের স্ত্রী হয়ে কোনোদিন সুখী হওয়া সম্ভব নয়। তাই জানাল—সে ভারত যেতে রাজি, তবে শুধুই বোন হিসেবে। জেনের এই প্রত্যাখ্যান শুনে সেন্ট জন বললেন—তার বিয়ের প্রস্তাব অস্বীকার মানেই খ্রিস্টান বিশ্বাস অস্বীকার করা।
Chapter 35, জেনের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও রচেস্টারের ডাক
সেন্ট জন বারবার চেষ্টা করলেন জেন আয়ারকে বিয়েতে রাজি করাতে। তিনি বোঝালেন—ভারতে মিশনারি কাজই তার জীবনের মহান লক্ষ্য। জেন জানত—ভারতের উত্তাপ আর কঠোর পরিশ্রম তার জীবন দ্রুত শেষ করবে। মৃত্যু তাকে ভয় দেখায় না, তবে সে জীবনে সত্যিকারের ভালোবাসা অনুভব করতে চায়। ডায়ানা স্পষ্ট বলল—জেন যেন না যায়। তার মতে, সেন্ট জন জেনকে শুধু নিজের বিশাল মিশনারি কাজে একটি যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চান। এক সন্ধ্যায় খাবারের পর সেন্ট জন প্রবল আবেগে প্রার্থনা পাঠ করলেন। তার কণ্ঠে এমন প্রভাব ছিল যে, জেন প্রায় রাজি হয়ে যাচ্ছিলেন বিয়েতে। ঠিক তখনই হঠাৎ জেন শুনতে পেলেন এক দূরবর্তী ডাক— “Jane! Jane! Jane!” এটি ছিল রচেস্টারের কণ্ঠস্বর। সে ছুটে বাইরে গিয়ে উচ্চারণ করল—সে প্রতিজ্ঞা করছে রচেস্টারের কাছে ফিরে যাবে।
Chapter 36, থর্নফিল্ডে প্রত্যাবর্তন – আগুন ও বার্থার মৃত্যু
জেন থর্নফিল্ডে ফেরার প্রস্তুতি নিলে, সেন্ট জন দরজার নিচে এক চিরকুট ঢুকিয়ে দিলেন। তিনি সতর্ক করলেন—জেন যেন প্রলোভনে না পড়ে। মনে সংশয় থাকলেও জেন দৃঢ় হলো। সে বিশ্বাস করল—যে কণ্ঠস্বর আর অনুভূতি সে পেয়েছে, তা সত্য। থর্নফিল্ডের পথে যেতে যেতে জেন নিজের জীবনের পরিবর্তন ভাবল। এক বছর আগে সে ছিল নিঃসঙ্গ ও দরিদ্র। এখন তার আছে পরিবার ও সম্পদ। থর্নফিল্ডে পৌঁছে জেন হতবাক হলো। পুরো বাড়ি ভস্মীভূত, কেবল ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে।
এক সরাইখানার মালিক থেকে সে জানল ঘটনা। বার্থা পালিয়ে এসে জেনের পুরোনো ঘরে আগুন ধরায়। আগুন ছড়িয়ে পড়লে রচেস্টার সব দাসদাসীকে বাঁচান। শেষমেষ বার্থা ছাদে দাঁড়িয়ে উন্মাদের মতো হাসল, তারপর আগুনের মধ্যে ঝাঁপ দিল। বাড়ি ভেঙে পড়ায় রচেস্টার গুরুতর আহত হলেন। তিনি এক হাত হারালেন, আর দৃষ্টিশক্তি গেল চিরতরে। এখন তিনি নিকটস্থ একটি ছোট বাড়ি ফার্নডিনে থাকেন।
Chapter 37, ফার্নডিনে রচেস্টারের সঙ্গে পুনর্মিলন
গভীর অরণ্যের মাঝে জেন পৌঁছাল ফার্নডিনে। উঠোনে সে দেখল রচেস্টারকে। তার দেহ এখনো বলিষ্ঠ, কিন্তু মুখে ভেসে আছে হতাশা আর দুঃখ। একজন চাকরের সাহায্য সে উপেক্ষা করল। দ্বিধাভরে আঙিনা ঘুরে আবার ঘরে ফিরে গেল। দরজায় চাকরদের সঙ্গে কথা বলে জেন ভেতরে প্রবেশ করল। রচেস্টার এক গ্লাস জল চাইলে, সেটি নিজেই তার কাছে পৌঁছে দিল। রচেস্টার জেনের কণ্ঠ শুনে প্রথমে ভেবেছিল—এ ভূতের আবির্ভাব। কিন্তু যখন তার হাত ধরল, বুঝল—সে বাস্তবেই জেন। আবেগে তাকে জড়িয়ে ধরল।
জেন জানাল তার নতুন সম্পদের খবর। মজার ছলে সেন্ট জনের নাম টেনে রচেস্টারকে হালকা ঈর্ষান্বিত করল, যাতে তার দুঃখ লাঘব হয়। রচেস্টার নিজের অক্ষমতার কথা বলে জেনকে যেতে বলল। কিন্তু জেন জানাল—সে এখন তাকে আরও বেশি ভালোবাসে। সে আর কখনও ছেড়ে যাবে না। অবশেষে রচেস্টার জেনকে বিয়ের প্রস্তাব দিল। জেন আনন্দে রাজি হলো। রচেস্টার স্বীকার করল—অহংকারের শাস্তি পেয়েছে। এখন সে প্রতিদিন প্রার্থনা করে। এক রাতে ঈশ্বরের সাহায্য চাইতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে উচ্চারণ করেছিল— “Jane! Jane! Jane!” তখনই সে যেন জেনের সাড়া শুনেছিল। জেন অভিভূত হলো তাদের এই অদ্ভুত সংযোগে। সে প্রতিজ্ঞা করল—রচেস্টারের “ভরসা ও পথপ্রদর্শক” হয়ে থাকবে। হাতে ধরে তাকে ঘরে ফিরিয়ে নিল।
Chapter 38, সমাপ্তি: “পাঠক, আমি তাকে বিয়ে করেছি”
অধ্যায় শুরু হয় বিখ্যাত লাইন দিয়ে— “পাঠক, আমি তাকে বিয়ে করেছি।” ফার্নডিনে জেন ও রচেস্টারের ছোট, নীরব বিয়ে সম্পন্ন হয়। তারা একসাথে নিখুঁত সুরে বসবাস করতে থাকে। জেন ক্লান্ত না হয়ে স্বামীকে পথ দেখায়, তাকে পড়ে শোনায়, আর চারপাশের প্রকৃতি বর্ণনা করে। সেন্ট জন কখনো বিয়ের বিষয়ে কিছু লেখে না। তবে মেরি আর ডায়ানা ভীষণ খুশি হয়। জেন ছোট্ট অ্যাডেলকে দেখতে যায়। সে দেখে, কঠোর স্কুলে অ্যাডেল দুঃখী। জেন তাকে বাড়ির কাছের উদার পরিবেশের স্কুলে নিয়ে আসে। ভালো ইংরেজি শিক্ষায় অ্যাডেলের “ফরাসি ত্রুটি” মুছে যায়। সে হয়ে ওঠে ভদ্র ও নীতিবান তরুণী।
বিয়ের দুই বছর পর, রচেস্টারের এক চোখে আংশিক দৃষ্টি ফিরে আসে। ঠিক সেই সময় জন্ম হয় তাদের প্রথম সন্তানের—একটি ছেলে, যার চোখে রচেস্টারের কালো দীপ্তি। ঘটনার দশ বছর পর জেন পাঠককে জানায়—ডায়ানা আর মেরি দুজনেই ভদ্র ও স্নেহশীল স্বামী পেয়েছে। তারা নিয়মিত জেনের কাছে আসে। সেন্ট জন একাই ভারতে যায়। শেষ চিঠিতে সে মৃত্যুর পূর্বাভাস দেয়। জেন জানায়, আর কোনো চিঠির আশা নেই তার। জেন দুঃখ পায় না, কারণ সেন্ট জন ঈশ্বরের কাজ করেছে। সে উদ্ধৃত করে তার শেষ চিঠি— “হে প্রভু যীশু, আমাকে শীঘ্র গ্রহণ করো।”
থিমসমূহ
প্রেম ও আবেগ (Love and Passion): এই উপন্যাসে প্রেম প্রধান বিষয়। জেন গভীরভাবে রচেস্টারকে ভালোবাসে। কিন্তু সে কখনো নিজের নীতি ভুলে যায় না। যখন জানতে পারে বার্থা জীবিত, তখন সে রচেস্টারকে ছেড়ে যায়। সে প্রমাণ করে—প্রেম যদি সত্য হয়, তবে সেটি সততা ও শ্রদ্ধার উপর দাঁড়ায়। শুধু আবেগ বা শারীরিক আকর্ষণই যথেষ্ট নয়। প্রকৃত প্রেম মানে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বন্ধন।
স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদা (Independence and Self-Respect): জেনের জীবনে স্বাধীনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে আরাম বা সম্পদের জন্য নিজের মর্যাদা বিসর্জন দেয় না। রচেস্টার যখন তাকে ভোগবিলাসের প্রস্তাব দেয়, তখন সে প্রত্যাখ্যান করে। কারণ এতে তার আত্মসম্মান নষ্ট হতো। আবার সেন্ট জনের প্রস্তাবও সে ফিরিয়ে দেয়। কারণ সেই সম্পর্কে প্রেম ছিল না। জেন প্রমাণ করে, একজন নারীকে প্রথমে নিজের প্রতি সৎ হতে হবে।
সামাজিক শ্রেণি ও বৈষম্য (Social Class and Inequality): উপন্যাসে সমাজের শ্রেণিভেদ স্পষ্ট। জেন এতিম ও দরিদ্র, তাই তাকে ছোট করা হয়। রচেস্টার ধনী ও প্রভাবশালী। সেন্ট জন ধর্মীয় ক্ষমতার প্রতীক। তবুও জেন মনে করে, মানুষের মূল্য টাকায় নয়। নিজের যোগ্যতাতেই সে সমান মর্যাদা পেতে চায়। রচেস্টারের সঙ্গে তার বিয়ে প্রমাণ করে—প্রেম শ্রেণি ভেদ মানে না।
ধর্ম ও নৈতিকতা (Religion and Morality): ধর্ম নানা রূপে দেখা যায়। মিস্টার ব্রকলহার্স্ট ধর্মকে ব্যবহার করে নিষ্ঠুরতা চালায়। সেন্ট জন অত্যন্ত ধর্মনিষ্ঠ, কিন্তু ভালোবাসাহীন। হেলেন বার্নস ক্ষমা আর বিশ্বাস শেখায়। জেন ভারসাম্যপূর্ণ পথ বেছে নেয়। সে বিশ্বাস করে—ঈশ্বর চান মানুষ যেন ভালোবাসা, সুখ আর নৈতিক সততার সাথে বাঁচে।
নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা (Feminism and Women’s Rights): এই উপন্যাসকে প্রাথমিক নারীবাদী রচনা বলা হয়। জেন সবসময় সমতার দাবি করে। রচেস্টারের সাথেও সে সমান মর্যাদা চায়। সে সমাজের চাপ, সম্পদ, বা পুরুষের নিয়ন্ত্রণ মেনে নেয় না। তার কণ্ঠ, তার সিদ্ধান্ত, তার শক্তি—সবই প্রমাণ করে, নারী স্বাধীন হতে পারে। নারীর সম্মান ও সিদ্ধান্তের অধিকার অস্বীকার করা যায় না।
Quotes
- Quote: “I am no bird; and no net ensnares me: I am a free human being with an independent will.” – (Jane Eyre, Chapter 23)
“আমি কোনো পাখি নই; কোনো জালে আমাকে ধরা যাবে না: আমি একজন স্বাধীন ইচ্ছার মানুষ।”
Explanation: Here, Jane asserts her independence. She declares that even if she loves someone, she will not sacrifice her freedom. This is a symbol of women’s liberation and self-respect.
ব্যাখ্যা: এখানে জেন তার স্বাধীনতার দাবি করে। সে জানিয়ে দেয়, কাউকে ভালোবাসলেও নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দেবে না। এটি নারীর মুক্তি ও আত্মমর্যাদার প্রতীক।
- Quote: “Do you think I am an automaton? — a machine without feelings?” – (Jane Eyre, Chapter 23)
“তুমি কি ভাবো আমি যন্ত্র? — অনুভূতিহীন কোনো মেশিন?”
Explanation: Jane says this while expressing her feelings to Rochester. She shows that women are not just about outward beauty; they also have emotions and self-respect.
ব্যাখ্যা: রচেস্টারের প্রতি আবেগ প্রকাশের সময় জেন বলে এই কথা। সে বোঝায়, নারী শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, তাদেরও অনুভূতি ও আত্মমর্যাদা আছে।
- Quote: “Reader, I married him.” – (Jane Eyre, Chapter 38 – Final Chapter)
“পাঠক, আমি তাকে বিয়ে করেছি।”
Explanation: This is the most famous line of the novel. Short but powerful. Here, Jane takes control of her own life. It is her declaration of love, equality, and independent choice.
ব্যাখ্যা: এটি উপন্যাসের সবচেয়ে বিখ্যাত লাইন। ছোট হলেও শক্তিশালী। এখানে জেন নিজেই নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এটি তার ভালোবাসা, সমতা এবং স্বাধীন সিদ্ধান্তের ঘোষণা।
- Quote: “I am not an angel, and I will not be one till I die: I will be myself.” – (Jane Eyre, Chapter 24)
“আমি কোনো দেবদূত নই, আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হবও না: আমি আমি-ই থাকব।”
Explanation: Jane clearly declares that she will not live in hypocrisy. She will live as she truly is. This is a symbol of honesty and self-identity.
ব্যাখ্যা: জেন স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, সে ভণ্ডামি করবে না। সে যেমন, তেমনভাবেই বাঁচবে। এটি সত্যনিষ্ঠা ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক।
- Quote: “I would always rather be happy than dignified.” – (Jane Eyre, Chapter 34)
“আমি সবসময় মর্যাদার চেয়ে সুখকেই বেশি চাই।”
Explanation: In this quote, Jane says that happiness is the true purpose of life. If one gains only social respect but lacks love and peace, then it is meaningless.
ব্যাখ্যা: এই উক্তিতে জেন বলে, সুখই জীবনের আসল উদ্দেশ্য। শুধু সামাজিক সম্মান পেলেও যদি ভালোবাসা ও শান্তি না থাকে, তবে তা অর্থহীন।
- Quote: “Life appears to me too short to be spent in nursing animosity or registering wrongs.” – (Helen Burns, Chapter 6)
“আমার কাছে জীবন এত ছোট যে তা ঘৃণা পুষে রাখা বা অন্যায়ের হিসাব রাখায় নষ্ট করা উচিত নয়।”
Explanation: Helen Burns teaches Jane forgiveness and patience. This quote symbolizes Christian values and inner peace.
ব্যাখ্যা: হেলেন বার্নস জেনকে ক্ষমা ও ধৈর্যের শিক্ষা দেয়। এই উক্তি খ্রিস্টীয় মূল্যবোধ ও আত্মশান্তির প্রতীক।
- Quote: “Conventionality is not morality. Self-righteousness is not religion.” – (Jane Eyre, Preface)
“চলতি নিয়ম নৈতিকতা নয়। আত্মম্ভরিতা ধর্ম নয়।”
Explanation: Here, Jane criticizes the hypocrisy and superficiality of society. She shows that true morality comes from inner honesty, not just from following rules.
ব্যাখ্যা: জেন এখানে সমাজের ভণ্ডামি ও বাহ্যিকতা সমালোচনা করে। সে দেখায় প্রকৃত নৈতিকতা আসে ভেতরের সততা থেকে, শুধু নিয়ম মানা থেকে নয়।
- Quote: “I ask you to pass through life at my side—to be my second self, and best earthly companion.” – (Mr. Rochester, Chapter 23)
“আমি চাই তুমি জীবনপথে আমার পাশে থাকো—আমার দ্বিতীয় সত্তা, আর পৃথিবীর সেরা সঙ্গী হয়ে।”
Explanation: Rochester’s proposal reveals the depth of love. He wants Jane as an equal partner. It is a symbol of equality and true love.
ব্যাখ্যা: রচেস্টারের প্রস্তাবে প্রেমের গভীরতা প্রকাশ পায়। সে জেনকে সমান অংশীদার হিসেবে চায়। এটি সমতা ও প্রকৃত ভালোবাসার প্রতীক।
- Quote: “Prejudices, it is well known, are most difficult to eradicate from the heart whose soil has never been loosened or fertilized by education.” – (Narrator/Jane, Chapter 29)
“পূর্বাগ্রহ দূর করা খুব কঠিন, বিশেষত সেই হৃদয় থেকে যা শিক্ষা দিয়ে কখনো নরম বা উর্বর হয়নি।”
Explanation: This quote is powerful in showing the importance of education. It suggests that ignorance gives birth to prejudice, and education sets people free.
ব্যাখ্যা: শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে এই উক্তি শক্তিশালী। এখানে বোঝানো হয়—অজ্ঞতা থেকে পক্ষপাত জন্মায়, আর শিক্ষা মানুষকে মুক্ত করে।
- Quote: “I care for myself. The more solitary, the more friendless, the more unsustained I am, the more I will respect myself.” – (Jane Eyre, Chapter 27)
“আমি নিজের মতো চলি। আমি যতই একাকী হই, যতই বন্ধু বা ভরসাহীন হই, তবুও আমি আমার আত্মসম্মান বজায় রাখব।”
Explanation: When Jane leaves Rochester’s house, she says this. It is a declaration of self-respect, courage, and independence.
ব্যাখ্যা: যখন জেন রচেস্টারের বাড়ি ছেড়ে যায়, তখন সে বলে এই কথা। এটি আত্মমর্যাদা, সাহস আর স্বাধীনতার ঘোষণা।
আরো পড়ুনঃ Pride and Prejudice Bangla Summary
ভাষার অলংকার
- Metaphor (রূপক): যখন একটি জিনিসকে আরেকটি জিনিস বলা হয়, তবে like বা as ব্যবহার না করে। উদাহরণ: “আমি কোনো পাখি নই; আর কোনো জাল আমাকে আটকে রাখতে পারবে না: আমি একজন স্বাধীন মানবসন্তান, যার নিজের ইচ্ছাশক্তি আছে।” – (জেন, অধ্যায় ২৩)। ব্যাখ্যা: জেন নিজেকে জালে আটকে থাকা পাখির সঙ্গে তুলনা করেছে। কিন্তু তা অস্বীকার করে, রূপকের মাধ্যমে নিজের স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরশীলতার ঘোষণা দিয়েছে।
- Irony (বক্রোক্তি/বিদ্রূপ): যখন কথার অর্থ আসল কথার উল্টো হয় বা প্রত্যাশিত ঘটনার বিপরীত ঘটে। উদাহরণ: মি. রচেস্টার নিজের বিয়ে গোপন করে জেনকে বিয়ে করতে চান। বিয়ের দিন সত্য প্রকাশিত হলে জেন হতবাক হয় এবং সব ভেঙে যায়। ব্যাখ্যা: এটি বিদ্রূপাত্মক, কারণ জেন ভেবেছিল রচেস্টার সৎ ও প্রেমে সত্যনিষ্ঠ। কিন্তু সত্য উল্টো প্রমাণ করে বিশ্বাসঘাতকতা দেখিয়েছে।
- Simile (উপমা): যখন সরাসরি তুলনা করতে like বা as ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ: “আমার মনে হলো আমি যেন এমন ছায়ায় চিরদিন ভেসে থাকতে পারি।” – (জেন, অধ্যায় ২৩)। ব্যাখ্যা: এই লাইনটি জেন আয়ার বলেছেন। তিনি তাঁর বিবাহের আগের রাতে এক অস্বস্তিকর অশুভ পূর্বাভাস প্রকাশ করেছেন, যা বার্থা ম্যাসনের ভয়াবহ হস্তক্ষেপের পূর্বাভাস বহন করে।
- The Red Room (লাল ঘর): প্রতীক: ট্রমা ও দমন। শৈশবে জেনকে যে রেড রুমে বন্দি করা হয়েছিল, তা শাস্তি, অবিচার ও ভয়ের প্রতীক। এটি জেনের জীবনে নিষ্ঠুরতা, সামাজিক বৈষম্য এবং মানসিক কষ্টের বিরুদ্ধে তার আজীবন সংগ্রামের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
- Fire and Ice (আগুন ও বরফ): প্রতীক: আবেগ ও নিয়ন্ত্রণ। জেনের আবেগ, ভালোবাসা ও বিদ্রোহের (যেমন রচেস্টারের জ্বলন্ত স্বভাব) প্রতীক আগুন। বরফ প্রতীক সংযম, শীতলতা ও নিয়ন্ত্রণের (যেমন সেন্ট জনের কঠোর ইচ্ছাশক্তি)। আগুন ও বরফের ভারসাম্য জেনের জীবনে সামঞ্জস্য খোঁজার প্রতীক।
- Bertha Mason (বার্থা ম্যাসন): প্রতীক: দমন ও উন্মাদনা। বার্থা হলো রচেস্টারের গোপন পাপ, সামাজিক লজ্জা এবং দমিত আবেগের ধ্বংসাত্মক শক্তির প্রতীক। সে জেনের “অন্ধকার প্রতিচ্ছবি”—যা দেখায় স্বাধীনতা ও পরিচয় অস্বীকার করলে কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।
- Thornfield Hall (থর্নফিল্ড হল): প্রতীক: গোপন রহস্য ও নিয়তি। বাইরে থেকে থর্নফিল্ড মহৎ ও নিরাপদ মনে হলেও, ভেতরে লুকিয়ে আছে রচেস্টারের গোপন করা স্ত্রী। যে আগুন এটিকে ধ্বংস করে, তা সত্য উন্মোচন, পাপের শাস্তি এবং নতুন জীবনের সম্ভাবনার প্রতীক।
- The Splitting of the Chestnut Tree (চেস্টনাট গাছের বিভাজন): প্রতীক: ভাঙা বন্ধন ও নিয়তি। যে চেস্টনাট গাছের নিচে রচেস্টার জেনকে প্রস্তাব দেয়, পরে বজ্রপাতে সেটি দ্বিখণ্ডিত হয়। এটি তাদের বিচ্ছেদের পূর্বাভাস দেয়। তবে গাছের শিকড় জীবিত থাকে, যা তাদের অবশেষে পুনর্মিলনের নিয়তির প্রতীক।
Moral Lesson:
- Marriage should be based on love and equality.
- Even in suffering, faith gives strength.

Nice
Thanks
Thanks a ton