Tree without Roots Bangla Summary (বাংলা সামারি)

ট্রি উইদাউট রুটস উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। এই উপন্যাসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সেই সময়ে যারা ধর্মব্যবসায়ী ছিল তাদের সমালোচনা করেছেন বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে। উপন্যাসের নামটির মধ্য দিয়েই এমন একটি ধারণা প্রকাশ পায় যার কোন ভিত্তি নেই অর্থাৎ অন্ধ ধর্ম বিশ্বাস। 

earn money

যা থাকছে

Key Facts:

  • Tree without Roots নেওয়া হয়েছে Choudhury and Syed Waliullah এর লালসালু উপন্যাস থেকে।
  • লেখকঃ Choudhury and Syed Waliullah
  • প্রকাশকালঃ ১৯৪৮ সাল।

থিমঃ

  • ধর্ম
  • অস্তিত্ববাদ
  • অন্ধ বিশ্বাস
  • কুসংস্কার
  • গ্রামীণ সমাজ
  • মাজার ব্যবসা
  • প্রতারণা

উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মজিদ। সম্পূর্ণ উপন্যাসের সামারি ভালোভাবে বুঝতে পারার জন্য এর চরিত্রগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি

  • মজিদ এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র।
  • রহিমা এবং জমিলা জনক্রমে মজিদের প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী।
  • খালেক মোহাম্মদ নগরের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
  • আমেনা এবং তানু বিবি খালেক চেয়ারম্যানের প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী। আমিনা খালেক চেয়ারম্যানের স্ত্রী কিন্তু তার কোন সন্তান হয়নি।
  • ধোলামিয়া তনুর বড় ভাই।
  • আওয়াল পুরের পীর মজিদের কম্পিটিটর
  • কুলসুম রহিমার হেল্পিং হ্যান্ড
  • একই সাথে আরো একটি পরিবার পাব যেখানে এক বৃদ্ধ লোক এবং তার স্ত্রীর চার সন্তান রয়েছে যাদের মধ্যে তাহের কাদের রতন এবং হাসুনির মা অন্যতম। 

হাসুনির মা বিভিন্ন কাজে মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমাকে সহায়তা করত। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো আওয়াল পুরের পীর যে কিনা হাত দিয়ে সূর্যকে থামিয়ে দিত বলে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তাছাড়া কুলসুম এবং আরও একটি বৃদ্ধ মহিলা ছিল এই উপন্যাসে। 

গ্রামের বর্ণনা

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


উপন্যাসটি শুরু হয়েছে নোয়াখালীর একটি বন্যাপ্রবণ এলাকায় যেখানে বছরের বেশিরভাগ সময়েই বন্যা সংঘটিত হয়ে থাকে। এই এলাকায় কোন স্কুল-কলেজ নেই শুধুমাত্র মাদ্রাসা দিয়েই ভর্তি। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ হই ধর্মভীর  আর সকলের মাথায় টুপি। এজন্যই উপন্যাসের এক পর্যায়ে বলা হয়ে থাকে যে এই গ্রামে যতটা না ফসল ফলে থাকে তার থেকে বেশি মানুষের মাথায় টুপি দেখা যায়।

বন্যপ্রবণ এলাকা হওয়ার কারণে বন্যার সময় মানুষের মধ্যে খাদ্য ভাব দেখা দেয়। সে সময় গ্রামের টুপি পরিহিত যারা মুরুব্বী রয়েছেন তারা সকলেই ধনী ব্যক্তিদের কাছে যায় এবং তাদের ধনসম্পদ লুটপাট করে এমনকি অনেক সময় খুন পর্যন্ত করে থাকে। 

গ্রামে যারা টুপি পরিহিত হুজুর ছিল তারা বেশিরভাগই তাদের দাড়ি-গোঁফ ওঠার পূর্বেই কুরআন মুখস্থ করে ফেলত। বন্যার সময় তারা তাদের নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যেত এবং যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল ট্রেন। মধ্যরাতে যখন গ্রামের রেল স্টেশনে ট্রেন এসে থামতো তখন সবাই হুড়োহুড়ি করে ট্রেনের ভেতরে উঠে যেত। 

মানুষ এতটাই হুড়হুড়ি করে ট্রেনে উঠতো যে একই পরিবারের মধ্যে পরিবারের সকল সদস্যরা ট্রেনে উঠেছে কিনা সেটা দেখার পর্যন্ত সময় পেত না। 

সরকারি কর্মকর্তা ও মজিদ

এরপরে প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে মধুপুরের জঙ্গলে একজন সরকারি কর্মকর্তা শিকার করতে গিয়েছে। জঙ্গলে গিয়ে শুনতে পেল যে সেখানে পাশে একটি মসজিদে কে যেন খুব সুন্দর সুরে আজান দিচ্ছে। আযান শুনে সে আশ্চর্য হয়ে গেল কারণ এরকম একটা জায়গায় এত সুন্দর সুর করে আজান দিচ্ছে সেটা প্রায় অসম্ভব ছিল কারণ সেখানে মানুষজন অনেক কম।

তারপর সে আস্তে আস্তে হেঁটে মসজিদের কাছে গিয়ে সেই লোকটিকে জিজ্ঞেস করল যে সে এখানে কি করছে। লোকটি তাকে উত্তর দিল যে এখানকার মানুষজন নাকি ইসলাম সম্পর্কে একদম অজ্ঞ যার কারণে সে এখানে এসেছে মানুষকে ইসলামের শিক্ষা দিতে।

আরো পড়ুনঃ মাস্টার্সের সকল কোর্স

 কিন্তু এই কথাটি ছিল সেই আযান দেওয়ার লোকটির সম্পূর্ণ বানানো একটি কথা। পরিপ্রেক্ষিতে সে সরকারি সেই কর্মকর্তাকে এখানে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দেয় যে সে শহরে একটি সরকারি চাকরি করে এবং এখানে স্বীকার করতে এসেছে। তার পূর্বপুরুষ নাকি মহব্বত নগর গ্রামে থাকতো। সে গ্রামে তার পূর্বপুরুষদের এখনো নাকি কিছু কবর রয়েছে। এই কথা শুনে আযান দেওয়া লোকটি ব্যাপারটা তার মাথায় কি জানি একটু ভেবে রেখে দিল।

মজিদের আবির্ভাব 

এর পরবর্তী প্রেক্ষাপটে দেখা গেল যে কাদের এবং তাহের দুজন তাদের জমি থেকে বাড়ির দিকে ফিরছিল তখন তারা গ্রামের চার রাস্তার মোড়ে একজন ব্যক্তিকে জায়নামাজ বিছিয়ে দোয়া করতে দেখল। এটা দেখে তারা বেশ আশ্চর্য হয়ে গেল। এখন যে গ্রামের কথা বলা হচ্ছে এই গ্রামে অবশ্য বন্যার কোন সমস্যা নেই এবং অন্যান্য আরো দশটা স্বাভাবিক গ্রামের মতই এই গ্রাম যার নাম মহব্বত নগর। সন্ধ্যায় যখন কাদের এবং তাহের বাড়ি ফিরল তখন তারা দেখতে পেল যে গ্রামের সবচেয়ে বড় বাড়ি অর্থাৎ চেয়ারম্যানের বাড়িতে প্রচন্ড চেচামেচি হচ্ছে।

মজিদ ও গ্রামের কবর আবিষ্কার

সেখানে তারা গিয়ে দেখল যে লোকটি গ্রামের চার রাস্তার মাথায় দোয়া করছিল সেই লোকটি চিৎকার করে করে মানুষের মধ্যে কি যেন বলছিল। কাছে গিয়ে তারা দেখল যে লোকটি সবাইকে বলছে এই গ্রামে মোদাচ্ছের পীর এর কবর রয়েছে এবং গ্রামের সবাই সেই কবরকে যত্ন না করে বরং তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে।

সে গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক লোক চেয়ারম্যানের বাবাকে জিজ্ঞেস করল যে তিনি এই ব্যাপারে কিছু জানেন কিনা। তিনি যখন জানেন না বলে দিলেন তখন গ্রামের সবাই তাকে জিজ্ঞেস করল যে এ ব্যাপারে সে কিভাবে জানে।

তখন সে সবাইকে বলল যে মোদাচ্ছের পীর তাকে নাকি স্বপ্নে দেখিয়েছে যে সে যেন এই গ্রামে এসে তার কবরের যত্ন করে এবং গ্রামের মুসলমানদের মধ্যে ইসলাম শিক্ষা দেয়। অতঃপর সেই লোকটি গ্রামের অন্যান্য সকলকে চেয়ারম্যানের নির্দেশ মতে একটি কবরের কাছে নিয়ে গিয়ে জায়গাটি পরিষ্কার করে দেখল যে সেখানে সত্যিই একটি কবর রয়েছে।

তারপর গ্রামের সবাই মিলে কবর টি পরিষ্কার করে চারপাশে লাঠি গেড়ে দিল এবং তার ওপরে লাল একটি কাপড় বসিয়ে দিল যাকে বলা হয় লালসালু। 

মোদাসসের পীরের মাজার শুরু

সেদিন থেকেই মজিদ গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হতে থাকলো ধীরে ধীরে এবং নির্দ্বিধায় চালিয়ে যেতে থাকলো তার ধর্ম ব্যবসা। সে এতটাই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল যে গ্রামের সব ধরনের মজলিস এবং বিচারে চেয়ারম্যান পর্যন্ত তার সিদ্ধান্ত মেনে নিত এবং তার কথা শুনতো। এর একটা অন্যতম কারণ হলো মজিদ যখন কোন বিচারের রায় দিত তখন সে আগে কুরআন তিলাওয়াত করে নিত এবং সেখান থেকে ব্যাখ্যা দিত। যদিও সে কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা ঠিকঠাক জানে না কিন্তু গ্রামের মানুষ এ সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার কারণে তারা কিছু বুঝতে পারত না। 

আমরা এই উপন্যাসে কিছু উপকাহিনী পাবো। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে হাসোনির মা এবং বৃদ্ধ লোকটির কাহিনী।

হাসুনির মা ও বৃদ্ধ লোক

হাসুনীর মা রহিমাকে সব কাজে সহায়তা করত এবং সে রহিমাকে বলতো যে মসজিদ যেন দোয়া করে তার মারা যাওয়ার জন্য। এর কারণ রহিমা জিজ্ঞেস করলে সে উত্তর দেয় যে তার বাড়িতে তার বৃদ্ধ বাবা এবং তার মা রয়েছে। মা সারাদিন প্যারালাইজড অবস্থায় শুয়ে থাকে এবং বাবাকে বিভিন্ন উল্টাপাল্টা কথা বলে। এমনকি অনেক সময় বাবার পুরুষত্ব নিয়ে কথা বলে যা শুনে বাবা মাকে মারতে চায়।

এগুলো দেখে তার খারাপ লাগে বিধায় সে মারা যেতে চায়। এই ঘটনা মজিদ শোনার পর একদিন মজিদের সাথে সে বৃদ্ধ লোকটির দেখা হল এবং সে বৃদ্ধ লোকটিকে বলল যে তোমার পরিবারে এসব কি হচ্ছে এগুলো তো খুব খারাপ।

এই কথা শুনে বৃদ্ধ লোকটি রেগে গিয়ে মজিদকে উত্তর দিল যে আমার পরিবারে যাই কেন না হয় সেটা নিয়ে তোমার মাথা ব্যথা করার কোন দরকার নেই। তারপর বৃদ্ধ লোকটি ভাবতে লাগলো যে আমার পরিবারের এই কথাগুলো মজিদ কে কে বলতে পারে। 

ভাবতে ভাবতে এসে বুঝতে পারল যে তার মেয়ে যেহেতু রহিমার সাথে কাজ করে তাই সে রহিমাকে বলে দিয়েছে আর রহিমা মজিদকে বলে দিয়েছে।

এটা ভেবে বৃদ্ধ লোকটি তার মেয়ে অর্থাৎ হাসুনীর মা কে প্রচন্ড মারধর করল। মারধরের শিকার হয়ে তার মেয়ে যখন মজিদের কাছে গিয়ে সব কিছু খুলে বলল তখন মজিদ গ্রামের সবাইকে ডেকে নিয়ে বিচারে বসলো।

বৃদ্ধ লোকের বিচার ও উধাও হয়ে যাওয়া

খালেক ব্যাপারী অর্থাৎ গ্রামের চেয়ারম্যান এই ব্যাপারটা বৃদ্ধ লোকটিকে বলছিল আর রেগে রেগে জিজ্ঞেস করছিল যে সে কেন এমন করল। সবাইকে থামিয়ে দিয়ে মজিদ বৃদ্ধ লোকটিকে জিজ্ঞেস করল যে তুমি যে এমন খারাপ আচরণ করছ তুমি কি নিজে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে যে তুমি নিষ্পাপ?

মজিদের এই কপটতা পূর্ণ কথা শুনে বৃদ্ধ লোকটি থমকে গেল কারণ আমরা কম বেশি সকলেই জানি যে কেউই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না যে আমরা একেবারেই নিষ্পাপ। তখন মজিদ মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর একটি কাহিনী শোনালো আর লোকটিকে আবারো দোষারোপ করা শুরু করলো।

বৃদ্ধ লোকটি সেখানে বসে কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে সেখান থেকে উঠে চলে গেল এবং দুইদিন যাবত সে খাওয়া-দাওয়া না করে ঘর থেকে বের হলো না। দুইদিন পর হঠাৎ করে ঝড় উঠলো এবং হাসুনীর মায়ের একটা বদ অভ্যাস ছিল যে ঝড়ের সময় সে চিৎকার চেঁচামেচি আর হৈ-হুল্লোড় করে সবাইকে ডাকতে থাকে।

সে যখন তার বাবার ঘরে গিয়ে দেখল যে তার বাবা দুই দিন ধরে না খেয়ে ঘরের মধ্যে শুয়ে আছে তখন তার বাবা তাকে ডাক দিয়ে বলল আমাকে একটু চিড়া দিবি মা?

এরকম আবেগপূর্ণ কথা শুনে বৃদ্ধ লোকটির মেয়ে তাকে চিড়া খেতে দিল এবং পরবর্তীতে আবারো যাওয়ার ফলে তাকে আরো একটু চিড়া খেতে দিল। ঝড় শেষ হয়ে যাওয়ার পর বৃদ্ধ লোকটি ঘর থেকে বের হয়ে নদীর ধারে চলে গেল এবং সে যে নদীর ধারে গেল আর সে কখনো ফিরে আসেনি।

এই চক্রান্ত ছিল মজিদের এবং সে বুঝতে পেরেছিল যে তার অস্তিত্বের ওপরে এই বৃদ্ধ লোকটি আঘাত হেনেছে যা তার জন্য ভয়াবহ। তাই সে বৃদ্ধ লোকটিকে চিরতরে সরিয়ে দিল।

আওয়াল পুরের পীর ও মজিদ

আমরা আরেকটি কাহিনী দেখতে পাবো যেখানে আওয়াল পুরের পীরের কথা বলা হয়েছে। মজিদ তার ধর্মব্যবসা ভালোই চালিয়ে যাচ্ছিল এবং একদিন সে খবর পেল যে আওয়াল পুরের পীর নামে পাশের গ্রাম ে এক ব্যক্তি রয়েছে যার খুব নাম ডাক চারিদিকে। 

মহব্বত নগর থেকে মানুষজন পানি পড়ার উদ্দেশ্যে আওয়াল পুরের পীরের কাছে যেত। এটা শুনে মজিদ একদিন আওয়াল পুরের পীরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল এবং সে আউয়ালপুরের পীরের প্রধান মুরিদ মতলব খা অর্থাৎ সেখানকার চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পীর সম্পর্কে কিছু ধারনা পেল।

এই পীর নাকি আকাশে উড়তে পারে এবং সূর্যকে থামিয়ে রাখতে পারে। মজিদ জোহরের নামাজের সময় সেখানে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলো যেখানে কিসের নামাজ হচ্ছে কি হচ্ছে এসব বিভিন্ন কথা বলে। তারপর সেখানে নামাজে দাঁড়ানো ব্যক্তিরা বলছিল যে যোহরের নামাজের সময় সে কেন এখানে এসে চিৎকার চেঁচামেচি করছে।

মজিদ বলল যে যোহরের নামাজের ওয়াক্ত অনেকক্ষণ আগেই চলে গেছে। এভাবে তাদের সাথে তর্ক বিতর্ক করে মজিদ বলল যে ঠিক আছে চলো আমরা মেপে দেখি যে যোহরের নামাজের সময় আছে কিনা। মারতে গিয়ে দেখা গেল যে যোহরের নামাজের সময় একটু খানি চলে গিয়েছে এবং মজিদ এটা দেখে তাদেরকে বলল যে দেখো আমার কথা সত্যি হলো।

তখন সেখানকার মুসল্লিরা তাকে উত্তর দিল যে তারা যখন মাপতে শুরু করেছিল তখন নামাজের ওয়াক্ত ঠিক হয়েছিল। এটা শুনে মজিদ উত্তর দিল যে কেন তোমাদের পীর নাকি সূর্যকে থামিয়ে রাখতে পারে তাহলে থামিয়ে রাখল না কেন।

এর মাধ্যমে সে আউয়ালপুরের পীরকে ভুয়া প্রমাণিত করল এবং সেখান থেকে মহব্বত নগরে ফিরে চলে আসলো। গ্রামে ফিরে এসে মসজিদ একটি দল গঠন করলো এবং কালু মিয়ার নেতৃত্বে একটি দলকে পাঠিয়ে দিল আউয়ালপুরের পীরকে শায়েস্তা করার জন্য এই বলে যে সে ভুয়া ধর্ম প্রচার করছে।

তারা গিয়ে কিছুতো বলতে পারল না বরং মার খেয়ে ফিরে আসলো এবং হাসপাতালে ভর্তি হল। হাসপাতালে গিয়ে মজিদ ডাক্তারের যে সহকারী ছিল তাকে ডাক্তার মনে করল এবং তার সাথে কথা বলে গ্রামে ফিরে আসলো। কালু মিয়ার পরিবারের কাছে গিয়ে বলল যে কালু মিয়া ভালো আছে এবং সেখানে যে ডাক্তার তার চিকিৎসা করছে সে মসজিদের মুরিদ।

এই কথা বলে সে গ্রামে তার একটু আধিপত্য দেখাতে চেষ্টা করল যে তার মুরিদ সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

চেয়ারম্যানের বউ আমেনা এর পানি পড়া

এখানে আমরা আরেকটি কাহিনী দেখতে পাবো খালেক ব্যাপারীর। খালেক বেপারীর বড় বউ আমেনা বিবির বিয়ে হয়েছিল ১৩ বছর বয়সে। কিন্তু ১৭ বছর সংসার করার পরেও তার সন্তান হয়নি বরং খালেক ব্যাপারীর ছোট বউ তানু বিবির প্রতিবছর বাচ্চা হয়। এটা দেখে আমেনা বিবি খালেক ব্যাপারে কে বলে যে আওয়াল পুরের পীরের কাছ থেকে পানি পড়া এনে দিতে যাতে তার বাচ্চা হয়।

খালেক বেপারী এই দায়িত্ব দেয় তানু বিবির বড় ভাইকে। তার নাম ধলামিয়া। ধলা মিয়া চিন্তা করল যে মহব্বত নগর থেকে আওয়ালপুর যেতে হলে একটি তেঁতুল গাছ পাড়ি দিতে হয় যেখানে ভূত থাকে। তাই সে সেখানে না গিয়ে মজিদের কাছে গিয়ে সব কিছু খুলে বলল আর বলল যে তাকে যে টাকা দেওয়া হয়েছে সেটা সে মজিদকে দিয়ে দেবে।

মসজিদ যেন এই কথা খালেক ব্যাপারীকে না বলে। মজিদ এই কথা শুনে তার অস্তিত্বের উপর হুমকির কথা আবারও মনে পড়ে গেল এবং মানসম্মানে লেগে গেল।

এরপর যখন তার খালেক ব্যাপারীর সাথে দেখা হল তখন সে আওয়াল পুরের পীরের কথা জিজ্ঞেস করলে খালেক ব্যাপারে আশ্চর্য হল। যাইহোক একটা দুইটা কথা বলার পর মজিদ বললো যে আমেনা বিবির বাচ্চা হবে না কারণ তার পেটের ভেতরে নারীর প্যাঁচ রয়েছে।

চেয়ারম্যান ও আমেনা বিবির ডিভোর্স

সমাধানের কথা জানতে চাইলে মজিদ বলল যে বাচ্চা হতে হলে আমেনা বিবিকে সেহরি না খেয়ে রোজা রাখতে হবে, তারপর সারাদিন কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে। তারপর মজিদের দেওয়া পানি খেয়ে মাজারে চারদিকে ঘুরতে হবে। 

যে কথা সেই কাজ। আমেনা বিবি সারাদিন রোজা রেখে কুরআন তেলাওয়াত করে সেহরীর সময় পানি খেয়ে ঘুরতে লাগলো। আড়াই পাক ঘুরার পর যখন সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে তখন খালেক বেপারী ভাবল যে সারাদিন খাওয়া-দাওয়া না করার কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে।

কিন্তু মসজিদ বলল যে আসলে ব্যাপারটা সেরকম নয়। তার মনের ভেতরে এত পাপ যে মজিদের পানি পড়া সে সহ্য করতে পারেনি। এখন যদি খালেক বেপারী তার বড় বউকে তালাক না দেয় তাহলে তার পাপের কারণে সে নিজেও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

মজিদের এই খপ্পরে পড়ে খালেক বেপারী তার বড় বউ আমেনা বিবিকে তালাক দিয়ে দিল। 

আক্কাসের স্কুল নির্মাণ

আরেকটি উপকাহিনী রয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে আক্কাসের স্কুল নির্মাণের কাহিনী। আক্কাস গ্রামের একজন শিক্ষিত ছেলে এবং সে গ্রামে একটি স্কুল নির্মাণ করতে চায়। এই কথা শুনে মজিদ ভাবলো যে গ্রামে যদি স্কুল হয় এবং সবাই যদি পড়ালেখা শিখে তাহলে তার ধর্ম ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি।

তাই সে একদিন স্কুলের ব্যাপারে কথা বলার জন্য মিটিং ডাকলো এবং সেখানে স্কুলের ব্যাপারে কোন কথা না বলে সবাইকে বলল যে মজিদ একটি মসজিদ নির্মাণ করতে চায় গ্রামে। গ্রামের সবাই মসজিদের কথায় সাড়া দিল এবং আক্কাস স্কুলের কথা বলতেই আক্কাসের বাবা তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল।

প্রতিবাদি জমিলা

এই উপন্যাসে আমরা একটি প্রতিবাদী চরিত্র দেখতে পাবো যার নাম জমিলা। জমিলা হলো মজিদের ছোট বউ। একটি আশ্চর্য ব্যাপার হলো মজিদ যখন জমিলা কে বিয়ে করতে গিয়েছিল তখন জমিলা ভেবেছিল যে মজিদ হল বরের বাবা এবং রহিমা হল বরের মা।

জমিলা একটু অন্য ধরনের মেয়ে ছিল যে সারাদিন খাওয়া-দাওয়া করতে আর ঘুমিয়ে থাকত কোন কাজকর্ম করত না।

একদিন মজিদ জমিলাকে নামাজ পড়ার জন্য জায়নামাজে বসিয়ে রেখে বাইরে গেল এবং এসেছে দেখল যে জমিলা জায়নামাজে ঘুমিয়ে পড়েছে। এটা দেখে সে জমিলাকে প্রচন্ড মারধর করল টেনে হিজড়ে নিয়ে গিয়ে বাহিরে বেধে রাখল যার প্রতিবাদস্বরূপ জমিলা মজিদের মুখে থুতু দিয়েছিল।

তখন মজিদ সবাইকে বলে বেড়াচ্ছিল যে এটা জমিলা করেনি বরং এটা করেছে জমিলাকে ভর করা জিন। তারপর একসময় ঝড় আসলো এবং মজিদ রহিমাকে গিয়ে ধান উঠাতে বলল এবং রহিমা উত্তর দিল যে জীবনই যদি না থাকে তাহলে ধান তুলে কি হবে। তারপর রহিমা বাহিরে গিয়ে দেখল যে জমিলা সেভাবেই গাছের সাথে বাধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ

Ruhul Amin Robin
Ruhul Amin Robin
Hey, This is Ruhul Amin, B.A & M.A in English Literature from National University. I am working on English literature and career planning.

5 COMMENTS

  1. অনেক জাগায় মজিদ এর জাগায় মসজিদ হয়ে গেছে। আশা করি ঠিক করবেন।

  2. I’m from Tangail Korotia Govt Saadat College. This website will certainly help to the students of English Department. Everyone should search this excellent website of LX❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক