ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা কী?

প্রশ্নঃ ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা কী?

ভূমিকা: ইংরেজি Secularism শব্দের বাংলা হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। অর্থাৎ, এর অর্থ হল একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা। “ধর্মনিরপেক্ষ” শব্দের অর্থ ধর্ম থেকে “বিচ্ছিন্ন” হওয়া বা ধর্মীয় ভিত্তি না থাকা। 

ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা: ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা হলো এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীলতা বজায় রেখে, কোন বিশেষ ধর্মের প্রচার বা বিদ্বেষ ছড়ানো হয় না। এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস গড়ে তোলার স্বাধীনতা থাকে এবং তাদেরকে কোন নির্দিষ্ট ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতা মেনে চলতে বাধ্য করা হয় না।

ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার মূল বৈশিষ্ট্য:

আরো পড়ুনঃ সমকালীন বাংলাদেশে বিবাহ ও পরিবারের পরিবর্তনশীল রূপ আলোচনা কর।

  • ধর্মনিরপেক্ষতা: ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থায় কোন নির্দিষ্ট ধর্মের প্রচার বা শিক্ষাদান করা হয় না।
  • সমান অধিকার: সকল ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সমানভাবে উন্মুক্ত থাকে।
  • সম্মান: সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাবোধ এবং সহনশীলতা বজায় রাখা হয়।
  • যুক্তিবাদ: জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করা হয়।
  • মানবতাবাদ: মানবিক মূল্যবোধ এবং নীতিশাস্ত্রের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার গুরুত্ব:

  • সামাজিক সম্প্রীতি: ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা সমাজে সাম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করে।
  • জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা: ধর্মীয় ভেদাভেদ থেকে মুক্ত থাকায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা নিরপেক্ষভাবে সম্ভব হয়।
  • সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা: শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটে।
  • মানবিক মূল্যবোধ: মানবিক মূল্যবোধ ও নীতিশাস্ত্রের উপর জোর দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা নীতিবান ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে।
  • ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি: ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা সকল ধর্মের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে।

বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা: বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে একটি মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ নারীর ক্ষমতায়ন বা নারী উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর।

  • শিক্ষা নীতি: জাতীয় শিক্ষা নীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি ও বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
  • পাঠ্যক্রম: পাঠ্যক্রমে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উপসংহার: সমাজে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িকতা ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার পথে বাধা। আবার কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় প্রচারণার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে একটি মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিজস্ব নীতি অনুযায়ী শিক্ষাদান করা হয়।

Share your love
Riya Akter
Riya Akter

Hey, This is Riya Akter Setu, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 747

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *